সৌন্দর্য চর্চায় গোলাপ ফুলের ১০টি কার্যকার ব্যবহার
গোলাপ ফুলের সৌন্দর্য আর সুবাসে মুগ্ধ হয় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। গোলাপকে বলা হয় ফুলের রানী। প্রকৃতিক অনন্য সুন্দর এই ফুলে রয়েছে নানা ভেষজ গুণ।
এসব গুণের মধ্যে সৌন্দর্য চর্চার উপকরণও রয়েছে। বিভিন্ন প্রসাধনসামগ্রীতে গোলাপের পাপড়ি, নির্যাস প্রভৃতি ব্যবহার হয়ে থাকে। প্রাচীনকাল থেকেই গোলাপ ফুল সৌন্দর্য চর্চায় ব্যবহার হয়ে আসছে।
সূচিপত্র : ত্বকের যত্নে গোলাপ ফুল
- ত্বকের কোমলতা বাড়াতে
- ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার
- টোনার হিসেবে ব্যবহার
- প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার
- গোলাপজল এর ব্যবহার
- গোলাপের ফেসপ্যাক
ত্বকের কোমলতা বাড়াতে গোলাপ ফুলের ব্যবহার
কোমল করতে গোলাপের পাপড়ি বেশ কার্যকরী।২ কাপ পানিতে একটি তাজা গোলাপ ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে উঠে সেই পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিবেন। এটি ছাড়া আরেক উপায়ে ত্বক কোমল করতে পারেন।গোলাপের শুকনা পাপড়ি, সমপরিমাণ মধু ও দুধ মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করে নিন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্রণের জায়গায় লাগিয়ে নিন। সকালে ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণ দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বক কোমল হবে।
ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার গোলাপ ফুলের ব্যবহার
গোলাপের নিজস্ব একটি মিষ্টি গন্ধ রয়েছে। এটি প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বক পরিষ্কার করতে পারে।এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস উপাদান ত্বকে থাকা জীবাণু ধ্বংস করতে পারে। ন্যাচারাল ক্লিনজার তৈরির জন্য শুকনা গোলাপের পাপড়ি গুঁড়া করে নিতে হবে।এরপর ১ টেবিল চামচ গোলাপের পাপড়ি গুঁড়া পানির সঙ্গে মিশিয়ে ক্লিনজার তৈরি করে নিতে হবে। এছাড়া গোলাপের পাপড়ির মাস্ক তৈরি করতে পারবেন। এর জন্য শুকনা গোলাপের কুড়ি গুড়া করে তার সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিন। মুখে মেখে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
আরোপড়ুন: ঈদুল আজহা (কুরবানিতে) করণীয়
টোনার হিসেবে গোলাপ ফুলের ব্যবহার
যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের জন্য টোনার হিসেবে কাজ করতে পারে গোলাপের পাপড়ি। ১ কাপ পানি ফুটিয়ে নিন। এবার তার মধ্যে এক মুঠো গোলাপের কুড়ি দিয়ে পাএটি ঢেকে রাখতে হবে। এভাবে আধাঘন্টা রেখে দিন। মিশ্রণটি একটি পরিষ্কার স্প্রে বোতলে ভরে রাখুন। মুখ পরিষ্কার করতে এই মিশ্রণ টোনার হিসেবে মুখে স্প্রে করতে হবে।
প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে গোলাপ ফুলের ব্যবহার
স্পর্শকাতর ও শুষ্ক ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার হিসেবে দারুণ কাজ করে গোলাপের পাপড়ি। এতে থাকা ন্যাচারাল অয়েল স্কিন সেলের মধ্যে ময়েশ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে ত্বক ভেতর থেকে আর্দ্র থাকে। ময়েশ্চারাইজার তৈরি করার জন্য লাগবে গোলাপ জল, মধু, শিয়া বাটার ও পছন্দ মতো কয়েকটি এসেন্সিয়াল অয়েল। সবগুলো উপাদান ব্লন্ড করে নিন। ত্বকের দাগ ছোপ দূর করতে এটি কার্যকারী।
২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও ১ চা চামচ গোলাপের রস মিশিয়ে মুখে লাগান। এটি ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করবে।
ব্রণ দূর করতে গোলাপ ফুলের ব্যবহার
ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে গোলাপের পাপড়ি। ব্রণের স্থানগুলোতে গোলাপের পাপড়ি বেটে লাগাতে পারেন।
গোলাপের পাপড়ির সাথে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে ব্রণের স্হানটিতে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
নিমপাতা ও আলুর সাথে গোলাপের পাপড়ি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। সপ্তাহে ২/৩ বার এটি ব্যবহার করতে পারেন।
গোলাপের ফেসপ্যাক
গোলাপ ও চন্দনের ফেসপ্যাক তৈরি করতে প্রথমে গোলাপের পাপড়ি বেটে নিন। এর সাথে দুই টেবিল চামচ চন্দন গুড়া মিশিয়ে নিন। এরপর গোলাপজল মিশিয়ে দিয়ে মসৃণ পেস্ট তৈরি করে পুরো মুখে লাগিয়ে আধা ঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত গোলাপের ফেসপ্যাক ব্যবহারে পাবেন উজ্জ্বল গোলাপি ত্বক।
সানস্কিন হিসেবে
রোদে বের হওয়ার আগে গোলাপের রস, আমন্ড অয়েল ও শসার রস মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। এতে ত্বক রোদে পুড়ে যাওয়া হত থেকে বেঁচে যায়।
ঠোঁটের ঔজ্জ্বল্যে
প্রথমে চিনি ও লেবুর রসের মিশ্রণ দিয়ে ঠোঁট হালকাভাবে লাগিয়ে নিন। এর ফলে ঠোঁটের মৃত চামড়া উঠে আসে। এরপর গোলাপ পেস্ট ও মধুর মিশ্রণ ঠোঁটে লাগান। ১০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। গোলাপ ও মধুর ব্যবহারে ঠোঁটে কালচে ভাব দূর হয়, গোলাপি আভা ফুটে ওঠে। গোলাপ পেস্ট ও মধুর মিশ্রণ কাচের জারে করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন।
কনুইয়ের দাগ দূর করতে গোলাপ ফুলের ব্যবহার
কনুইয়ে দাগ থাকলে গোলাপ পেস্ট, অলিভ অয়েল, মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে সেই দাগের স্থানে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর চিনি দিয়ে মাসাজ করুন ৫ মিনিট ধরে। মোট ১৫ মিনিট লাগবে। সপ্তাহে ২ দিন এ মিশ্রন ব্যবহার করুন।
ডার্ক সার্কেল দূর করতে
চোখের নিচের কালি দূর করতে ও গোলাপ পাপড়ির ভূমিকা বেশ কার্যকারী। একটি পাএে কিছু সময় ধরে গোলাপ ভিজিয়ে রাখুন তারপর তুলা দিয়ে সেই পানি চোখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট চোখ বন্ধ রাখুন। এটি নিয়মিত করলে ডার্ক সার্কেল দূর হবে।
ঘরে বা স্নানঘর গোলাপ ফুলের ব্যবহার
ঘরে মিষ্টি সুবাস আনতে একগুচ্ছ রাখতে পারেন। অ্যারোমা হিসাবে গোলাপের ব্যবহার অতুলনীয়। গোসলের সময় বাথটাবে গোলাপের পাপরি ছড়িয়ে দিতে পারেন।
সুগন্ধি তৈরিতে যুগে যুগে সুগন্ধি হিসেবে গোলাপের পাপড়ি ব্যবহার হয়ে আসছে। আপনি ঘরে বসেই খুব সহজে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে পারফিউম তৈরি করতে পারবেন। এজন্য আপনার প্রয়োজন হবে গোলাপের পাপড়ি কুচি ২ কাপ, গোলাপজল ও স্প্রে বোতল।
একটি পাএে ২কাপ গরম পানি তার মধ্যে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে দিন। পাপড়িগুলো যেন পানিতে ডুবে থাকে।৩০ মিনিট অল্প আচে রেখে নামিয়ে পানি ছেঁকে নিন। পাপড়িগুলো চেপে চেপে পানি বের করে নিন। এতে অল্প একটু গোলাপজল মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ঢেকে নিন। তৈরি হয়ে গেলো পারফিউম। ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করতে হবে।
গোলাপজল এর ব্যবহার
ত্বকের যত্নে গোলাপজল ব্যবহার হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। গোলাপের পাপড়ির নির্যাস ত্বককে সতেজ করে৷ তাই ক্লান্তকর দিন শেষে একটা তুলায় খানিকটা গোলাপজল নিয়ে কিংবা মুখে সরাসরি স্প্রে করে নিলে মুখ সজীব হয়ে ওঠে। মাস্ক লাগানোর আগে ত্বক পরিষ্কার করতে গোলাপজল দিতে হয়। ত্বক যদি শুষ্ক আর খসখসে হয় তাহলে বোতলে গোলাপজল রেখে স্প্রে করুন। ভেজা ভেজা ভাবে রেখে লোশন লাগিয়ে নিন। এতে শুষ্কতা অনেকটা দূর হবে।মেকআপ করার আগে মুখে একটু গোলাপজল স্প্রে করে নিন। এতে করে মেকআপ অনেকটা সময় ধরে থাকবে এবং ফ্রেশ দেখাবে।
সর্বশেষ কথা
আমদানি করা গোলাপ ফুল সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক পদার্থ দেওয়া থাকে। তাই সরাসরি এসব ফুলের পাপড়ি ব্যবহার না করাই ভালো। সবচেয়ে ভালো হয় অর্গানিক গোলাপ ফুল ব্যবহার করা। তবে তা যদি পাওয়া না যায়, রাসায়নিকযুক্ত গোলাপ ফুল ব্যবহার করতে হয়, তাহলে পেস্ট করার আগে পরিষ্কার পানিতে পাপড়ি ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর তুলে নিয়ে সেগুলো দিয়ে পছন্দের প্যাকটি তৈরি করুন।
আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url