গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারীতা ১০টি

গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনার যদি না জানা থাকে তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কেননা গর্ভাবস্থায় যেহেতু একটি সংবেদনশীল সময় তাই খাবার তালিকা সঠিক হতে হবে। 

চলুন তাহলে কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা, কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক, গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খেলে কি হয় তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। 

সূচিপত্র 

গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা 

গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এখন আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব। কলমি শাক গ্রাম বা শহরে উভয় জায়গায় প্রচুর পাওয়া যায়। এটি চাষাবাদ করে হয় আবার আপনিও জলাশয়ের মধ্যে হয়। লোক সমাজে বলাবলি হয় যে কলমি শাকের উপকারিতা অনেক। সেজন্য আমাদের একটি প্রশ্ন মনে থাকে গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খাওয়া উপকারিতা সম্পর্কে। 

গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খাওয়া যেতে পারে কারণ কলমি শাকে অনেক উপকারিতা সমৃদ্ধ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। তাই আপনি চাইলেই একজন গর্ভবতী মাকে কলমি শাক খাওয়াতে পারেন। কেননা এই শাকে বেশি উপকারিতা রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা -

  • রাতকানা রোগ হয় ভিটামিন এ এর অভাবে। আপনি যদি গর্ভাবস্থায় শাক খান তাহলে আপনার এবং আপনার বাচ্চার রাত কানা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাছাড়া আপনার বাচ্চা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে কলমি শাক। কারণ কলমি শাকে প্রচুর ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান রয়েছে। 
  • গর্ভাবস্থায় শরীরের উষ্কতা দেখা দেয়। এই সমস্যা হয় ভিটামিন সি এর অভাবের ফলে কারণ গর্ভাবস্থায় ভিটামিন সি এর মাত্রা কমতে থাকে। আপনি যদি এই সমস্যা থেকে মুক্তি চান তাহলে সঠিক নিয়মে কলমি শাক খেতে হবে। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি। 
  • গর্ভাবস্থায় কলমী শাক খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মায়ের হাড় মজবুত হয়। গর্ভাবস্থায় মায়ের হাড়গুলো ভঙ্গুর দেখা দেয়। এই শাক খাওয়ার বাচ্চার বিকাশ হবে। সেই সাথে বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে বাচ্চা হাড় মজবুত হয়। 
  • গর্ভাবস্থায় একটি কমন সমস্যা দেখা যায় সেটি হল গর্ভবতী মায়ের নিম্ন রক্তচাপ। গর্ভবতী মায়েদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসা যায় না। এই সমস্যা হলে আপনি কলমি শাক খেতে পারেন। কারণ এই শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। 
  • গর্ভাবস্থায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। সেই কারণে এই সময় অনেক রোগ মায়ের শরীরে হানা দেয়। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খাওয়া উচিত। কাল এই শাকে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরিরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 
তাহলে আপনারা এতক্ষণ জানলেন যে গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি যে আপনারা বুঝতে পেরেছেন কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। 

কলমি শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা

কলমি শাকের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা এখন জানতে চলেছি। আমরা তো লোক সমাজে অনেক শুনে থাকি যে কলমি শাকের উপকারিতা অনেক বেশি। কলমি শাকে অনেক পুষ্টি উপাদান থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারি। চলুন তাহলে কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক -

  • যেহেতু কলমি শাকে ফাইবার আছে এবং নিম্ন মানের কার্বোহাইড্রেট থাকায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই আপনাদের যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত এই শাক খেতে পারেন। 
  • কলমি শাক খাওয়ার কোলন ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। শুধু এই ক্যান্সার নয় যেকোনো ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ করা যায় কলমি শাক থেকে। 
  • কলমি শাক খাওয়ার ফলে বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায় কারণ এখানে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার আছে। 
  • কলমি শাক হার্টের ব্লক এবং হার্টের যেকোনো সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। তাই আপনাদের এই সমস্যাগুলো থাকলে নিয়মিত কলমি শাক খেতে হবে। 
  • কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকায় আমাদের শরীরের আয়রনের অভাবে দূর করে থাকে। 
  • কলমি শাকে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম আছে তাই কলমি শাক খেলে হাড় মজবুত হয়। 
  • কলমি শাক বসন্তের চিকিৎসাতে প্রচুর ব্যবহার হয়ে থাকে। 
  • ফোড়া বা গ্রামের ভাষায় যেটাকে ফোট বলে তা কলমি শাক খাওয়ার ফলে উপকার করে৷ 
  • কলমি শাকে ভিটামিন সি থাকায় মুখের হলদে ভাব বা যেকোনো রকমের ঘা কম করে। 
  • রাতকানা সমস্যা দেখা যায় ভিটামিন এ এর অভাবে। তাই এই সমস্যা রোধে আমাদের প্রচুর পরিমাণ কলমি শাক খাওয়া উচিত। কলমি শাকে ভিটামিন এ থাকে। 
  • কলমি শাক খাওয়ার ফলে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। 
  • জন্ডিসের চিকিৎসাতে ভালো কাজ করে কলমি শাক। 
গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেল৷ যার পরবর্তী অংশে আমরা আলোচনা করব কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। 

কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক 

কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আমরা এখন জানতে চলেছি। কলমি শাকের অনেক উপকার রয়েছে পাশাপাশি কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। ক্ষতিকর দিক দেখতে গেলে এর তেমন ক্ষতিকর দিক নেয়। তবে কয়েকটি দিক দেখা যায়। চলুন তাহলে আমরা এই বিষয় সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি -

  • যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের এই কলমি শাক থেকে দূরে থাকায় উত্তম কারণ কলমি শাকে এলার্জি আছে। 
  • এই শাকে উপকার আছে বলে বেশি পরিমাণ খাওয়া যাবে না। কারণ বেশি পরিমাণ কলমি শাক খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হতে পারে। 
  • যাদের কিডনির সমস্যা আছে তারা কলমি শাক খাবেন না। কারণ এই শাক কিডনির ক্ষতি করে। 
একটি জিনিসের যতই উপকার থাকুন না কেন তার কিছু অপকারিতা অবশ্যই থাকবে। কোনো কিছু নিয়মের বাহিরে অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া যাবে না। তাই কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক এড়াতে নিয়ম মেনে খেতে হবে। 

কলমি শাক খেলে কি হয় 

সবচেয়ে পরিচিত শাকের একটি হলো কলমি শাক। এটি নানা পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। তবে অন্যান্য শাকের ভিড়ে এই শাক খুব একটা কদর পায় না। অবহেলিত এই শাক আপনার শরীরের নানা উপকার করতে পারে। 

  • লিভার ভালো রাখে। কলমি শাকে কিছু উপাদান রয়েছে যা লিভারের ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। 
  • নিয়মিত কলমি শাক খেলে হার্টের রক্তনালির ভেতর ময়লা জমে না। হার্ট ভালো রাখতে নিয়মিত কলমি শাক খেতে পারেন। 
  • ক্যান্সারের মতো মরণঘাতি রোগকে দূরে রাখতে কাজ করে কলমি শাক। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে সব ধরনের ফ্রি র্যাডিকেলস বের করে দেয়। ফলে শরীরে ক্যান্স্যার কোষের বৃদ্ধির আশঙ্কা কমে যায়। 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত অসুখ থেকে দূরে থাকা যায়। 
  • কলমি শাকে ভিটামিন এ থাকে যা চোখের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। চোখ ভালো রাখতে চাইলে নিয়মিত কলমি শাক খেতে হবে। 
গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেল৷ যার পরবর্তী অংশে আমরা আলোচনা করব কলমি শাকের খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। 

কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে

কলমি শাক খাওয়ার ফলে প্রেসার বাড়ে না কমে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমরা ইতোমধ্যে কলমি শাক সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে এসেছি। তবে আমাদের আরও একটি বিষয় জানতে হবে তা হলো কলমি শাক খাওয়ার ফলে প্রেসার বাড় কি না। চলুন জেনে নেওয়া যাক কলমি শাক খাওয়া ফলে প্রেসার বাড়ে কিনা তা সম্পর্কে। 

প্রেশার বেড়ে যাওয়া মানে বুঝায় রক্তের চাপ বেড়ে যাওয়া। উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তবে কলমি শাক খাওয়া উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে না। যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা নিয়মিত কলমি শাক খেতে পারেন। কারণ কলমি শাক রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে প্রেশার কমিয়ে দেয়। কলমি শাক প্রেশার বাড়ায় না বরং প্রেশার কমাতে সাহায্য করে। 

কলমি শাকে কি ভিটামিন আছে

কলমি শাকে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে যা এই অংশে আলোচনা করা হবে। কলমি শাকে কি ভিটামিন আছে তা জানতে সম্পন্ন পোস্টটি পড়ুন। কলমি শাক একটি আশযুক্ত শাক। যা সাধারণত ভাজি করে খাওয়া হয়।  

  • ভিটামিন বি-২ অর্থাৎ রিবোফ্লাভিন 
  • ভিটামিন সি ৪২ মিলি গ্রাম 
  • ভিটামিন ই 

তাছাড়া লোহ, আমিষ, শর্করা, ক্যালসিয়াম রয়েছে। 

গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেল৷ যার পরবর্তী অংশে আমরা আলোচনা করব কলমি শাকে এলার্জি আছে কিনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। 

কলমি শাকে এলার্জি আছে 

কলমি শাকে এলার্জি রয়েছে কি না সে সম্পর্কে জানা দরকার। কেননা কলমি শাকে যদি এলার্জি থাকে তাহলে এই শাক খাওয়ার উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক কলমি শাকে এলার্জি আছে কি না। 

আসলে কোনো খাবারে এলার্জি আছে কি না তা নির্ণয় করা সহজ না। কারণ কোন খাবারের এলার্জি আছে কি না তা নির্ভর করে কে খাবার গ্রহণ করছে তার উপর। সেই ব্যক্তির যদি এলার্জি থাকে তাহলে যেকোনো খাবারেই এলার্জি হতে পারে। তবুও আপনি যদি এই শাক খেতে পছন্দ করেন তাহলে অল্প করে পরিক্ষা করে নিতে পারেন। না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। 

কলমি শাকের বৈশিষ্ট্য

কলমি শাক যেমন বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর তেমনি এটি দেহের জন্য খুবই উপকারী। এই কলমি শাকে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি। এর পাশাপাশি রয়েছে ক্যালসিয়াম। এই ক্যালসিয়াম থাকার কারণে হাড়কে শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

এছাড়া যদি কলমি শাক নিয়মিত খাওয়া হয় তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। কলমি শাক চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে। 

কলমি শাক এর বৈজ্ঞানিক নাম 

কলমি শাকের বৈজ্ঞানিক নাম সম্পর্কে অনেকে জানতে চান। তাই তাদের জন্য আমারা নিচের অংশে কলমি শাকের বৈজ্ঞানিক নাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। 

কলমি শাকের বৈজ্ঞানিক নাম Ipomoea aquatica 

কলমি শাকের ইংরেজি নাম water spinach, river spinach,water morning glory, water convolvulus, Chinese spinach, Swamp cabbage এবং এশিয়া কিছু অঞ্চলে kangkong 

লেখকের মন্তব্য 

কলমি শাককে মানুষ কদর করলেও এর উপকারিতা রয়েছে অনেক। আর এই আর্টিকেল থেকে আমরা সহজে বুঝতে পারলাম গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। পাশাপাশি কলমি শাকে কি ভিটামিন আছে, কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে। 

আশা করি উপরোক্ত বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন এবং এই আর্টিকেল পড়ে উপকৃত হয়েছে। আমাদের আজকের আলোচনা ছাড়া কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url