ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণের ১০ টি উপায়
ফ্রিজ এখন প্রায় সবার বাড়িতে আছে। তাই মাংস কিংবা অন্যান খাবার সংরক্ষণের জন্য খুব একটা চিন্তা করতে হয় না। এরপরও যারা এমন আছেন যাদের বাড়িতে ফ্রিজ থাকলেও তাতে খুব বেশি জায়গা নেই তারা বিভিন্ন উপায়ে মাংস সংরক্ষণ করতে পারেন।
আপনি জেনে অবাক হবেন, ফ্রিজ ছাড়াও মাংস সংরক্ষণ করা যায় এবং তা প্রায় বছরখানেক ভালো থাকে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণের উপায় -
সূচিপত্র
মাংসের শুটকি করার মাধ্যমে মাংস সংরক্ষণ
চর্বি ছাড়া মাংসের ছোট, পাতলা টুকরায় একটু হলুদ আর একটু মরিচ মাখিয়ে নিন। চাইলে সামান্য লবণও দেওয়া যায়। এই মাংস তারে গেঁথে নিন। এবার ছাদে কিংবা জানালা বা বারন্দার গ্রিলে ঝুলিয়ে রাখুন, যেখানে পর্যাপ্ত রোদ আসে। খেয়াল রাখতে হবে, কোনোভাবে যাতে এতে পানি না পড়ে। রাতে ঘরের ভেতর এনে ঝুলিয়ে রাখুন। এভাবে মাংসের পানি শুকিয়ে আসবে।মাংসের পানি পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে অর্থাৎ নরম ভাবটা চলে গেলে বুঝতে হবে শুটকি তৈরি হয়ে গেছে। তবে শুটকি তৈরির মধ্যে কোন দিন রোদ না পেলে চুলার পাশে রেখে দেওয়া যেতে পারে। শুটকি হয়ে যাওয়ার পর বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে মাংস বছরখানেক ভালো থাকে।তবে মাঝেমধ্যে পাত্রের মুখ খুলে সারা দিনের জন্য রোদে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রথম৫ দুই -তিন মাস একটু যত্নশীল থাকুন। প্রথম মাসে সাত দিন অন্তর, পরের দুই মাস ১৫ দিন অন্তর রোদ দিন। এরপর মাসে একবার করে দিলেই হবে। শুটকি মাংস রান্নার আগে গরম পানিতে রাখাতে হবে ১ ঘন্টা।
আরো পড়ুন : সৌন্দর্য চর্চায় গোলাপ ফুল
ফ্রিজ ছাড়া মাংসের আচার তৈরি
বিভিন্ন টক ফলের আচারের মতো মাংস দিয়ে আচার তৈরি করা যায়। মাংসের এই আচার কিন্তু অনেকদিন রেখে খাওয়া যায় এবং এর স্বাদ মজার।
মাংসের আচার বানানোর জন্য আপনাকে প্রথমে মাংস টুকরো করে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর আপনারা পছন্দ অনুযায়ী মসলা মাখিয়ে নিতে হবে। তেল গরম করে মাংসগুলো ভেজে নেবেন। এরপর ঠান্ডা হয়ে গেছে কাঁচের জারে তুলে নিন।তাতে সরিষার তেল দিতে হবে যেন সেই তেলে মাংসগুলো ডুবে থাকে। এভাবে মাংসের আচার খুব সহজেই তৈরি করা যায়। এভাবে ৬মাস পর্যন্ত খেতে পারবেন।
সসেজ তৈরি করে মাংস সংরক্ষণ
সসেজ বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় একটি খাবার। এটি আসলে এক ধরনের প্রসেসড ফুড। যা বিভিন্ন রান্নায় খুব সহজেই ব্যবহার করা যায়। এভাবে ফ্রিজ ছাড়াই মাংস সংরক্ষণ করতে পারবেন। সসেজ তৈরির জন্য প্রথমে মাংস কিমা করে নিন।এরপর তাতে মসলা মিশিয়ে মাংস মেখে নিন। সসেজের খোল তৈরি করে তাতে মিশ্রণটি ভরে দিন। সসেজগুলো কড়া রোদে টানা কয়েক দিন শুকিয়ে বাইরে ঝুলিয়ে রাখুন। এভাবে সসেজ ভালো থাকবে তিন / চার মাস পর্যন্ত।
আরো পড়ুন : ঈদুল আজহা (কুরবানিতে) করণীয়
লেবু ও লবণ দিয়ে মাংস সংরক্ষণ
প্রথমে মাংসগুলো মাঝারি আকারে কেটে হালকাভাবে ছেঁচে নেন।এরপর লবণ ও লেবুর রসে ঘন্টাখানেক ডুবিয়ে রাখতে হবে তাহলে মাংসের ভেতরে সেটা পৌঁছায়। এভাবে মাংস কয়েকদিন পর্যন্ত ভালো রাখা যায়।
এজন্য মাংস কেটে পরিষ্কার করে আদা বাটা, রসুন বাটা, পিয়াজ বাটা দিয়ে মাংসটি কিছু সময় ম্যারিনেট করে রাখতে হবে। এরপর গরম ডুবো তেলে মসলাসহ মাংসগুলো ভেজে নিয়ে তেল ছেঁকে তারপর মাংস সংরক্ষণ করুন।
ডুবো তেলে মাংস সিদ্ধ করলে তা অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এরপর একদিন পরপর মাংসগুলো উচ্চতাপে গরম করতে হবে। এভাবে মাংস ১৫-২০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে।
ক্যানিং পদ্ধতি মাংস সংরক্ষণ
মাংস সংরক্ষণের আরেকটা পদ্ধতি হল থার্মাল স্টেরিলাইজেশন। এজন্য মাংস প্রায় ২৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় শুকিয়ে ঠান্ডা করা হয়। এই মাংস তারপর প্রায় এক বছর মুখ বন্ধ করে বয়ামে সংরক্ষণ করা যায়। এই মাংস সংরক্ষণের পদ্ধতিতে রান্না করার আগে মাংস কাটা,সিল করা, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং ঠান্ডা করার সময় সাবধানতার প্রয়োজন।
স্মোকিং পদ্ধতি মাংস সংরক্ষণ
এটি মাংস সংরক্ষণের অনেক পুরাতন একটি পদ্ধতি। যেখানে হট স্মোকিং অর্থাৎ ৩০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় মাংস পোড়ানো হয়। আ স ন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় পোড়াতে হয়। এরফলে তাপের ধোঁয়ায় মাংসের মাইক্রোবসগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এই পদ্ধতি সাধারণত মাংস ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করে থাকে।
ফ্রিজ ছাাড়া জ্বল দিয়ে সংরক্ষণ
এই পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করতে চাইলে প্রথমেই মাংস ভালো ভাবে ধুয়ে নিতে হবে। পরে এক কেজি মাংসের সঙ্গে এক কেজি চর্বি, পরিমাণ মতো হলুদ ও লবণ মাখিয়ে পানি দিয়ে জ্বাল দিলে এক থেকে দুই মাস পর্যন্ত মাংস ভালো থাকবে।
- দিনে অন্তত ১ বার ভালো করে জ্বল দিতে হবে
- জ্বল দেয়ার সময় খুব বেশি নাড়াচাড়া করা যাবে না।
- জ্বল দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে তলানিতে যেন না লেগে যায়
- মাংসের টুকরো একটু বড় রাখতে হবে নাহলে মাংস গেলে যাবে
- মাংসে শুধু তেল থাকবে পানি থাকা যাবে না।তাহলে মাংস গলে যাবে এবং গন্ধ হয়ে যায় তাড়াতাড়ি।
সিরকা বা ভিনিগারে ডুবিয়ে মাংস সংরক্ষণ
প্রথমেই দুই তিন কেজি মাংসে ৪ টেবিল চামচ বিট লবণ ও ৪ টেবিল চামচ বাদামি চিনি মাখিয়ে নিতে হবে। পরে ১ লিটার সিরকা বা ভিনিগারে মাংস পুরোপুরি ডুবানো অবস্থায় ঢেকে রেখে দিন।তবে এক বছরের মধ্যে এই মাংস খেয়ে ফেলতে হবে।
চর্বিতে ডুবিয়ে মাংস সংরক্ষণ
মাংস জ্বাল দিয়ে তারপর চর্বিতে ডুবিয়ে সংরক্ষণ করতে পারেন।এজন্য প্রথমে মাংস থেকে চর্বি ছাড়িয়ে মাঝারি সাইজে কেটে ধুয়ে সব পানি ধরিয়ে নিন। একটি পাত্রে মাংস চর্বি নিন। মাংসের চেয়ে চর্বির পরিমাণ বেশি হবে।যাতে জ্বল দিলে মাংস আধা ইঞ্চি চর্বির নিচে ডুবে থাকে। এবার মাংসের সঙ্গে পরিমাণমতো লবণ, গরম মসলা ও তেজপাতা দিয়ে বেশি আঁচে জ্বল দিন। পানি না শুকানো পর্যন্ত জ্বল করুন। মাংস চর্বিতে ডুবে থাকলে নামিয়ে ঠান্ডা করে ঢেকে রাখুন। পাত্রটি যাতে বেশি গরম জায়গায় না থাকে খেয়াল রাখুন। প্রথম সপ্তাহে দুই বার এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে একবার জ্বল দিতে হবে। এভাবে ১৫ দিন মাংস সংরক্ষণ করা যাবে।
ফ্রিজ ছাড়া মাংস ভেজে সংরক্ষণ
মাংস কেটে পরিষ্কার করে আদা বাটা, রসুন বাটা পেঁয়াজ বাটা দিয়ে মাংসটি কিছু সময় ম্যারিনেট করে নিন।এরপর গরম ডুবো তেলে মসলাসহ ভেজে এবং তেল ছেঁকে নিয়ে তা সংরক্ষণ করতে হবে।এরপর একদিন অন্তত মাংসগুলো উচ্চতাপে গরম করতে হবে। এভাবে ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে।
আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url