তুলশীপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক ২০টি
প্রাচীনকালে যখন চিকিৎসা শাস্ত্রের এত উন্নতি হয়নি তখন সাধারণত মানুষ বিভিন্ন ধরনের গাছ বা বিভিন্ন ভেষজ উপাদানের উপর নির্ভরশীল ছিল চিকিৎসার জন্য। আজকের আর্টিকেলে আমরা তুলসী পাতার উপকারিতা, অপকারিতা এবং তুলসী গাছের পরিচয় জানতে পারবো।
তুলসীপাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই পোস্ট যার মধ্যে তুলসীপাতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই বিস্তারিত জানতে সম্পন্ন আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সূচিপত্র
ভূমিকা
অন্য যে কোন ঔষধ গাছের চাইতে তুলসী গাছ অত্যন্ত বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ তুলসী গাছ যে কোন জায়গায় দেখা যায়। তুলসী গাছ পরিচর্চা করার জন্য তেমন কোন চেষ্টার প্রয়োজন নাই। অনেক সময় রাস্তাঘাটে আনাচে কানাচে অনেক অবহেলায় এই গাছ থাকে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছ যেমন : নিম, তুলসী, চিরতা, পাতরকুচি, কেশরাজ, বাসক, অর্জুন, দুর্বা, ধুতুরা, থানকুনি, স্বর্ণলতা ইত্যাদি দেখা যায়। তবে যারা এর গুরুত্ব বোঝেন তারা যত্ন করে থাকেন। বাড়িতে বারান্দায় টবে বা আঙ্গিনাতে লাগিয়ে পরিচর্যা করেন।
তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা
তুলসী পাতা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। অনেক রোগের ওষুধ এই তুলসীর পাতা। চলুন জেনে নেওয়া যাক তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা :
সর্দি কাশি : সর্দি কাশির ওষুধ হিসেবে তুলসী পাতা খুব উপকারী। এই গাছের তিন থেকে চারটি পাতা নিয়মিত খাওয়ার ফলে সর্দি কমে যায়। সর্দি কাশি কমানোর জন্য আপনি সরাসরি পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন অথবা পানিতে ফুটিয়ে চা করে খেতে পারেন। কাঁচা পাতা অথবা ফুটানো পাতার সাথে অল্প পরিমাণ মধু এবং কিছু লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।
মরণব্যাধি ক্যান্সার : ঘরোয়া উপায়ে ক্যান্সার থেকে মুক্তি পেতে তুলসী পাতা আমাদের সাহায্য করে। তুলসী পাতায় রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেটির নাম রেডিওপ্রটেকটিভ। অগ্নাসয় টিউমার, ব্রেস্ট ক্যান্সারের মতো ভয়ঙ্কর অসুখ থেকে আমাদের দূরে রাখতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ : ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জ্বর হলে তুলসীপাতা খেলে তা ওষুধের মতো কাজ করে। কোন সমস্যা ছাড়া আপনি নিয়মিত প্রতিদিন যদি তুলসীপাতা পানিতে ফুটিয়ে খান তাহলে সর্দি কাশি বা জ্বর থেকে মুক্তি পাবেন। শরীরের কোন স্থান কেটে গেলে রক্তপাত বন্ধ করতে তুলসীপাতা ক্ষত স্হানে লাগিয়ে রাখুন।
গলা ব্যথা : যেকোন ধরনের গলা ব্যথার সমস্যা হলে আপনি তুলসীপাতা খেলে পারেন। জ্বর সর্দি কাশির কারণে গলা ব্যাথা হোক কিংবা টনসিলের সমস্যার কারণে হোক উভয় ধরনের সমস্যা দেখা দিলে তুলসীপাতা খেলে পারেন।
বুকের সমস্যা : আগেই বলেছি কাশি সারাতে তুলসীপাতা অতুলনীয়। তাছাড়া শ্বাসকষ্ট, এজমা, ফুসফুসের সমস্যা মতো বিভিন্ন সমস্যার মোকাবেলা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হার্ট এর সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তুলসীপাতা রক্ত জমাট বাধতে বাধা দেয়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কম থাকে।
পেটের রোগ : পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় তুলসীপাতা একদম নায়কের মতো কাজ করে। গ্যাস কোষ্ঠকাঠিন্য, আলসার, পেট ব্যথা দূর করতে পারে।
ডায়াবেটিস : ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকতে চাইলে অবশ্যই আমাদের রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সুগারের মাত্রা তখনই কম থাকে যখন রক্তে ইনসুলিন উৎপাদনের কাজটা সহজ করে তুলসীপাতা।
শরীর ব্যথা : জ্বরের কারণে আমাদের শরীরে অনেক সময় ব্যথা হয়। এছাড়া আমরা অনেক সময় বিভিন্ন কারণে মাথা ব্যথা করে থাকে। এইজন্য তুলসীপাতা খুব সহজ সমাধান।
আজকের আর্টিকেলের আলোচনার বিষয় হলো তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। যার পরবর্তী অংশে আমরা আলোচনা করব তুলসীপাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। বিস্তারিত জানতে সম্পন্ন পোস্ট পড়ুন।
তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক
তুলসীপাতার উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যায় না তবে দুনিয়াতে প্রত্যেকটা জিনিসই ভালো এবং মন্দ দিক রয়েছে। তেমনি তুলসীপাতা খাওয়ার ক্ষতিকর দিক রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক তুলসীপাতা খাওয়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
নারীর ক্ষেত্রে : তুলসীপাতার অনেক গুণ হয়েছে এটা সবাই জানি। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় ভাবে অতিরিক্ত পরিমাণ গ্রহণ করে তবে সেটি অবশ্যই ক্ষতিকর হবে। নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত তুলসীপাতা গ্রহণ অনেক সময় গর্ভধারণে বাধা সৃষ্টি করে।
পুরুষদের ক্ষেত্রে : মাত্রা অতিরিক্ত তুলসীপাতার ব্যবহার পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা অনেক কমিয়ে দেয়।
রক্তপাত : তুলসীপাতার গুণাগুণ সম্পর্কে আপনারা জেনেছেন তুলসীপাতা রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। তবে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে রক্ত পাতলা হয়ে যায়। যার ফলে কোন অংশ কেটে গেলে তখন স্বাভাবিক রক্ত জমাট বাধতে পারে না। যেকোন অপারেশন বা সার্জারির আগে এবং পরে তুলসীপাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
নিম্ন রক্তচাপ : কারো নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থেকে থাকলে অবশ্যই তুলসীপাতা থেকে দূরে থাকুন। নিম্ন রক্তচাপের অত্যমত কারণ হচ্ছে পটাশিয়াম আর তুলসীপাতায় পটাশিয়াম রয়েছে।
দাঁত : দাঁত সুন্দর হওয়ার অত্যতম কারণ হচ্ছে দাঁতে থাকা এনামেল। অতিরিক্ত তুলসীপাতা চিবিয়ে খাওয়ার ফলে তুলসীতে থাকা পারদ এবং আয়রন দাঁতের এনামেলকে নষ্ট করে যার ফলে দাঁতের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং দাঁতের ব্যথা শুরু হয়।
আজকের আর্টিকেলের আলোচনার বিষয় হলো তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। যার পরবর্তী অংশে আমরা আলোচনা করব তুলসীপাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। বিস্তারিত জানতে সম্পন্ন পোস্ট পড়ুন।
তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
এখন আমরা আলোচনা করব তুলসীপাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। তুলসীপাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে
তাজা তুলসীপাতা চিবিয়ে খাওয়া : প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৩-৫ টি ভাজা তুলসীপাতা চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং শ্বাসতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
তুলসীপাতার চা : ৫-৬ টি তুলসীপাতা, এক কাপ পানি, মধু বা লেবু। এক কাপ পানি ফুটিয়ে নিন। ফুটন্ত পানিতে তুলসীপাতা যোগ করুন ৫-১০ মিনিট ফুটতে হবে। চা ছেঁকে মধু বা লেবু মিশিয়ে পান করুন।
প্রতিদিন ১-২ কাপ তুলসীপাতার চা পান করা যেতে পারে। যা ঠান্ডা, কাশি এবং অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
তুলসীপাতার রস : এক মুঠো তুলসীপাতা ধুয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেড করে রস বের করুন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১চা চামচ তুলসীপাতার রস পান করুন।
তুলসীপাতার পাউডার : শুকনো তুলসীপাতা গুড়ো করে পাউডার তৈরি করা যায়। প্রতিদিন এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ তুলসীপাতার পাউডার মিশিয়ে পান করা যায়।
খালি পেটে তুলনী পাতা খাওয়ার উপকারিতা
তুলসীপাতার প্রতিদিন সকালে কয়েকটা খালি পেটে খেলে এটি আপনার শরীর থেকে অনেক অসুখ দূর করতে সাহায্য করে। শরীরকে কর্মঠ ও শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন সকালে কয়েকটি তুলসীপাতা চিবিয়ে খেলে এটি মুখের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। এছাড়া তুলসীপাতায় থাকা এন্টিব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদানের ফলে সকালে তুলসীপাতা খেলে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করে। দাঁত ও মাড়ি শক্তিশালী করে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
তাই প্রতিদিন সকালে কয়েকটি করে তুলসীপাতা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
তুলসী পাতার রস খাওয়ার নিয়ম
১টি বা ২টি তুলসি পাতা নিয়ে ২ টেবিল চামচ মধু আধা চিমটি হলুদের গুঁড়া, আধা চিমটি লং পেপার, আধা চিমটি কালো গোলমরিচ সবকিছু ব্লেড করে নিতে হবে।
পাঁচ মিলি করে দিনে ২/৩ বার এটি খেতে পারেন। যেহেতু প্রতিটি উপাদান খুব গরম প্রকৃতির তাই দুই সপ্তাহ খাওয়ার পর এটি বন্ধ করতে হবে। অনেকে সকালে উঠেই তুলসীপাতা কাচা চিবিয়ে খেয়ে থাকেন সেটি মোটেই সঠিক না। এই রস খাওয়ার ৫-১০ মিনিট পর হালকা গরম পানি খাবেন। সবচেয়ে ভালো হয় কৃঞ্চ তুলসি খেতে পারলে। সেটা পাওয়া যায় না তাহলে সাধারণ তুলসীপাতা খাবেন।
তুলসী পাতার রসের উপকারিতা
তুলসী একটি ঔষধি গাছ। তুলসী গাছের পাতা, বীজ, বাকল ও শেকড় সবকিছুই অতি প্রয়োজনীয়। ঔষধিগুণের এই তুলসী দিয়ে তৈরি ওষুধ বিশেষ কার্যকর।
তুলসীর আরও একটি বিশেষ গুণ রয়েছে। সেটি হলো মশা তাড়ানো। মশার কামড় থেকে বাঁচতে হলো তুলসী ব্যবহার করতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক তুলসীপাতার রসের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা :
- তুলসীপাতা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি পান করুন। জ্বর ও ঠান্ডা লাগা প্রতোরোধ করবে।
- তুলসীপাতা বেটে তার সাথে মধু ও আদা মিশিয়ে খান। জমে থাকা সর্দি থেকে মুক্তি পাবেন।
- তুলসীপাতা ও চন্দনের সঙ্গে বেটে কপালে লাগিয়ে দেখুন তাহলে মাথা ব্যথা দূর হবে।
- তুলসীপাতা বমি বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে।
- তুলসির মধ্যে আছে ময়েশ্চারাইজার। এর গুণে আপনার ত্বক থাকবে উজ্জ্বল।
চুলের যত্নে তুলসীপাতা
আমাদের মধ্যে অনেকে জানে না চুলের যত্নে তুলসীপাতা ব্যবহার হয়। চুলের যত্নে তুলসীপাতার গুরুত্ব জানতে নিচের অংশটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। চলুন জেনে নেওয়া যাক চুলের যত্নে তুলসীপাতার ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত :
- আপনি জেনে অবাক হবেন যে তুলসীপাতায় থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাস আমাদের মাথার ত্বক হাইড্রেট করতে সাহায্য করে।
- তুলসীপাতার রস চুলের ব্যবহার করলে চুল তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায়। মাথার খুশকি দূর করতে তুলসীপাতার রস কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- যুগ যুগ ধরে চুল পরিষ্কার করতে তুলসীপাতার তেল ব্যবহার হয়ে আসছে।
- চুল পড়া বন্ধ করতে নারকেল তেলের সাথে তুলসীপাতার রস ব্যবহার করলে দ্রুত চুল পড়া বন্ধ হয়। নারিকেল তেলের সাথে তুলসীপাতা সিদ্ধ করে এই তেল তৈরি করতে হবে।
আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url