২০২৫ সালের শবে কদর কত তারিখ-দোয়া নিয়ম ফজিলত
আমাদের আজকের আলোচনা বিষয় শবে কদর নিয়ে। আজকের আলোচনায় থাকবে ২০২৫ সালের শবে কদর কত তারিখ, শবে কদরের দোয়া, শবে কদরের নামাজ ও দোয়া, শবে কদরের ফজিলত নিয়ে। তাই বিস্তারিত জানতে সম্পন্ন পোস্টটি পড়ুন।
একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের শবে কদর সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। কারণ শবে কদরের রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিল। এই রাতে আল্লাহ দোয়া কবুল করে থাকেন। ২০২৫ সালের শবে কদর কত তারিখ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
সূচিপত্র
২০২৫ সালের শবে কদর কত তারিখ
শবে কদর শব্দের অর্থ হলো মর্যাদাপূর্ণ রাত অথবা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর। যার অর্থ সম্মানিত রাত। লাইলাতুল কদরের রাত হচ্ছে হাজার রাতের চেয়ে উত্তম রাত।
পবিত্র কুরআন মাজিদ নাজিলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা এই রাতকে হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং সম্মানিত রাত হিসেবে আমাদের জন্য দান করেছেন। রমজানের শেষ দশ দিনের যেকোনো একটি বিজোড় রাত লাইলাতুলকদর তালাশ করা যায়, অর্থাৎ ২১,২৩,২৫,২৭, ২৯ রমজান দিবাগত রাতগুলোতে শবে কদর তালাশ করা হয়। তবে আলেমদের গবেষণায় এবং বুজুর্গানেদ্বীনের মতে ২৬ শে রমজান দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৭ রমজান পবিত্র শবে কদরের অন্যতম সম্ভাব্য রাত হিসেবে ধরা হয়।
শবে কদর ২০২৫ কত তারিখ
বাংলাদেশে সাধারণত ২৭ রমজান রাত্রিকে শবে বরাতের রাত্রি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সঠিক নিয়ম হচ্ছে শেষ ১০ রমজানের বিজর রাত্রিগুলোতে ইবাদত করা। কারণ ওই বিজোড় রাত্রি থেকে যেকোনো একটি রাত্রি হবে লাইলাতুলকদরের রাত।
তাই আপনারা যারা শুধুমাত্র ২৭ রমজানের রাত্রিতে কদরের রাত বিবেচনা করে ইবাদাত করবেন তাদের জন্য লাইলাতুল কদরের রাত হচ্ছে ২৬ শে মার্চ শুক্রবার।
আজকে কি লাইলাতুল কদর
আজকে যদি রমজান মাসের শেষ ১০ রোজার বেজোড় রাত্রির একদিন হয়ে থাকে। অন্য দিকে ২৭শে রমজানের রাত্রি বাংলাদেশে পালন করা হবে ২৮শে মার্চ রোজ শুক্রবার। আপনারা যারা সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রয়েছেন তাদের জন্য লাইলাতুল কদরের রাত ২৭ মার্চ রোজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত।
শবে কদরের দোয়া
আমাদের আর্টিকেলের এই অংশে শবে কদরের দোয়া সম্পর্কে জানবো। এই রাত হলো হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত। এই রাতে কোন বান্দা যদি তার গুনাহ ক্ষমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে মাফ করে দেন। শবে কদরের দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত -
১ম শবে কদরের দোয়া :
'আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন, তুহিব্বুল আফওয়া,ফাফু আন্নি।'
বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসের, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।
২য় শবে কদরের দোয়া :
'রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন'
বাংলা অর্থ : হে আমার প্রভু! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার উপর রহম করুন, আপনিই তো সর্বশেষ্ঠ রহমকারী।
৩য় শবে কদরের দোয়া :
'রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন'
বাংলা অর্থ : হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও আমাদের প্রতি রহম করুন। আপনি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।
৪র্থ শবে কদরের দোয়া
'রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি '
বাংলা অর্থ : হে আমার প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।
৫ম শবে কদরের দোয়া :
'রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ক্বিনা আজাবান নার'
বাংলা অর্থ : হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ইমান এনেছি, সুতরাং আপনি আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।
৬ষ্ঠ শবে কদরের দোয়া :
'রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন'
বাংলা অর্থ : হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।
৭ম শবে কদরের দোয়া :
'রাব্বানাগফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুনিনা ইয়াকুমুল হিসাব'
বাংলা অর্থ : হে আমাদের প্রভু! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর।
৮ম শবর কদরের দোয়া :
'সামিনা ওয়া আত্বানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছির'
বাংলা অর্থ : আমরা আপনর বিধান শুনলাম এবং মেনে নিলাম, হে আমার রব! আমাদের ক্ষমা করুন, আপনার দিকেই তো আমাদের ফিরে যেতে হবে।
৯ম শবে কদরের দোয়া :
'রাব্বানাগফিরলানা ওয়ালি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি'
হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা করুন এবং যারা আমাদের আগে যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যু বরণ করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন।
শবে কদরের নামাজ
শবে কদরে বিশেষ নামাজের কোনো নির্দিষ্ট বিধান নেই, তবে কিছু সুন্নত নামাজ রয়েছে যা এই রাতে পড়তে পারেন। শবে কদরের নামাজ অধিক পরিমান কুরআন তিলাওয়াত, জিকির ও দোয়ার মাধ্যমে অতিবাহিত করা উচিত। এই রাতে এক রাকাত নামাজ পড়লে তা সাধারণ নামাজের চেয়ে হাজার গুণ অধিক সাওয়াবের হয়।
বিভিন্ন ইসলামী স্কলাররা শবে কদরে অতিরিক্ত নামাজ পড়ার প্রতি গুরুত্বরোপ করছেন। আপনি এই রাতে নফল নামাজ পড়তে পারেন এবং প্রচুর দোয়া করতে পারেন। এক রাকাত নামাজের মধ্যে সূরা আল-ফাতিহা ও সূরা ইখলাস পাঠ করার পর ইস্তেগফার পাঠ করা বিশেষভাবে ফজিলতপূর্ণ।
শবে কদরের গুরুত্ব
শবে কদরের নামাজ ও দোয়া শুধু ব্যক্তি বিশেষের জন্য নয়, পুরো মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি মহান রাত। কুরআনে সূরা কদরে এই রাতের অশেষ গুরুত্ব ব্যাখা করা হয়েছে :
'শবে কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম'
এটি প্রমাণিত হয় যে শবে কদরের একটি রাত, সাধারণত হাজার মাসের (৮৩ বছরের) চেয়ে উত্তম। অর্থাৎ এই রাতে আল্লাহর কাছে বান্দার দোয়া অধিকতর গ্রহণযোগ্য এবং তাঁর প্রতি প্রার্থনা অধিকতর সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শবে কদরের রাতে করণীয়
শবে কদরের রাতটি আপনার জীবনের পরিবর্তনের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ হতে পারে। এই রাতে শবে কদরের নামাজ ও দোয়া পড়ার মাধ্যমে আপনি একদিকে যেমন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন, তেমনি অন্যদিকে আপনার ভবিষ্যত জীবনের দোয়া করতে পারেন।
নফল নামাজ : যতটা সম্ভব বেশি নফল নামাজ পড়ুন। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া খুবই ফলপ্রসূ।
কুরআন তিলাওয়াত : শবে কদরে কুরআন তিলাওয়াতের অশেষ সওয়ার রয়েছে। তাই এই রাতে কুরআন পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দোয়া ও ইস্তেগফার : দোয়া ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে আপনার সমস্ত পাপ মাফ করারোর চেষ্টা করুন।
জিকির ও তাসবীহ : আল্লাহর স্মরণে থাকা, যেমন সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ইত্যাদি।
বিশেষ দোয়া : যেকোনো দোয়া চাইতে পারেন, বিশেষ করে যে দোয়া আপনি আপনার জীবনে সত্যিই চান।
শবে কদরের অর্থ
শবে কদরের অর্থ "গৌরবময় রাত" বা বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ রাত। এটি এমন একটি রাত, যেখানে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির জন্য তার বিধান নাজিল করছেন, বিশেষ করে কুরআন। এই রাতটি আল্লাহর কাছে অত্যন্ত সম্মানিত এবং এর মাধ্যমে তিনি তার বান্দাদের দিকে মঙ্গলপ্রাপ্তির এক দিগন্ত উন্মুক্ত করেন।
শবে কদরের ফজিলত
শবে কদরের রাত সাওয়াব ও ফজিলত প্রতিটি মুসলিমের জন্য বিরাট উপহার। এটি এমন একটি রাত যেখানে আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি অশেষ রহমত ও ক্ষমা বর্ষণ করেন।
এই রাতে আল্লাহ বান্দাদের দোয়া কবুল করেন, তাদের পাপ মাফ করেন এবং তাদের জীবনের সকল সংকট সমাধান করেন। শবে কদরের রাতটি আমাদের জীবনকে পুনরায় সাজানোর এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার এক উত্তম সুযোগ।
লেখকের মন্তব্য
আমাদের আজকের আলোচনার মাধ্যমে আপনাদের মাঝে শেয়ার করেছি শবে কদরের দোয়া, ২০২৫ সালের শবে কদর কত তারিখ, শবে কদরের নামাজ, শবে কদরের ফজিরত, শবে কদরের দোয়া এসব বিষয়।
আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন এই রমজানের শবে কদর কত তারিখ হবে বা কত রমজানে শবে কদর হবে এই বিষয়টি। শবে কদরের রাত হাজার রাতের শ্রেষ্ঠ রাত তাই বেশি বেশি দোয়া করতে হবে আল্লাহর কাছে।
আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url