শবে বরাত ২০২৫ কত তারিখ - নিয়ম দোয়া ফজিলত
শবে বরাত হচ্ছে আল্লাহর কাছে ইবাদতের মাধ্যমে কান্নাকাটি করে মাফ চাওয়ার রাত। শবে বরাত ২০২৫ কত তারিখ এবং শবে বরাতের ইবাদত ও হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
সূচিপত্র
শবে বরাত ২০২৫ কত তারিখ
আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাতে শবে বরাত পালন করা হয়। শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাতে এবং ১৫ তারিখের শুরুতে যে রাত সেই রাতে পবিত্র শবে বরাত পালন করা হয়।
সেই হিসেবে ২০২৫ সালের শবে বরাত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে অর্থাৎ ১৩ ফেব্রুয়ারি নিয়ে যে রাত সেই রাতে শবে বরাত ২০২৫ অনুষ্ঠিত হবে। সহজ ভাবে বলতে গেলে, ২০২৫ সালের শবে বরাত ১৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে অনুষ্ঠিত হবে।
শবে বরাত পালনের নিয়ম
শবে বরাতের রাতে আল্লাহ প্রথম আসমানে এসে বান্দাদের বলেন 'হে আমার বান্দারা, তোমাদের কার কি প্রয়োজন আমাকে বলো। আমি আল্লাহর ধনভান্ডারে কিছুর অভাব নেই'। কারণ শবে বরাতের রাতে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে থাকে। বান্দা ক্ষমা চাইলে আল্লাহ মাফ করে দেন।
বান্দাদের সকল চাওয়া পূরণ করেন৷ শুধু মাত্র দুই শ্রেণির ব্যক্তি ব্যতিত এইদিন সবার দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। শবে বরাত পালনের আসল নিয়ম হচ্ছে, এই দিন রাতে আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
নফল ইবাদত করতে হবে। আল্লাহর কাছে রিজিকের ব্যবস্থা করতে দোয়া করতে হবে। শবে বরাতের রাত যত বেশি ইবাদত করা হবে আল্লাহ তার বান্দাদের তত বেশি দোয়া কবুল করবেন। আল্লাহর কাছে রিজিকের জন্য সাহায্য চাইতে হবে।
জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়ার জন্য দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে কান্না করতে হবে। এই রাতে এশার নামাজের পরে যত সম্ভব নফল ইবাদত করা উচিত। তবে সারা রাত জেগে সকালে ফরজ নামাজ কাযা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
শবে বরাত হচ্ছে আল্লাহর কাছে ইবাদতের মাধ্যমে কান্নাকাটি করে মাফ চাওয়ার রাত। রহমত চাওয়ার রাত। সেই রাতে আল্লাহর ইবাদত ব্যতিত অন্য কোনকিছু করা মানেই পাপ।
শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম
শবে বরাত ২০২৫ কত তারিখ ও নিয়ম দোয়া ফজিলত নিয়ে আজকের এই আর্টিকেল। যার মধ্যে এখন আমরা আলোচনা করব শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম। বিস্তারিত জানতে সম্পন্ন আর্টিকেলটি পড়ুন।
শবে বরাত উপলক্ষে যে আপনাকে নামাজই পড়তে হবে এমনটা না। নফল ইবাদত করলেই হবে। তবে একমাত্র নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর খুব কাছে যাওয়া যায়। তাই নামাজ ইবাদত ই সবথেকে সেরা।
এদিন এশার নামাজ পড়ে সুন্নত আদায়ের পরে দুই রাকাত করে কয় রাকাত ইচ্ছা নফল নামাজ পড়া উত্তম। তবে এটি বাধ্যতামূলক না৷ এছাড়া জিকির, কোরান তিলাওয়াত সহ অন্যান্য নফল ইবাদত করা যাবে।
মুক্তির রাত বা শবে বরাত পবিত্র রমজান মাস শুরুর ১৫ দিন আগে এই দিনটি আসে। শাবন মাসের ১৫ তারিখ দিবাগত রাতকে শবে বরাত বলা হয়। শবে বরাতের রাতে এশার ফরজ এবং সুন্নাত নামাজ পড়ার পর দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়তে হয়।
এই নামাজ পড়লে এর অনেক ফায়দা আছে। তবে কেউ না পড়লে পাপ নেই। ২ রাকাত করে সর্বনিম্ন ১২ রাকাত নামাজ পড়া উচিত। ১২ রাকাত পড়তে হয়ে তবে এর থেকে বেশি নামাজ আদায় করলে কোন সমস্যা নেই।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত ও দোয়া
অন্যান্য নামাজের মতো শবে বরাত এর নামাজেও নিয়ত এবং দোয়া আছে৷ তবে শবে বরাতের নামাজের উদ্দেশ্য নিয়ে নামাজে দাড়ালে নামাজের নিয়ত হয়ে যায়। তবে নিয়ত আলাদাভাবে পড়া অতি উত্তম।
শবে বরাতের নামাজ নিয়ত আরবিতে : নাওয়াইতুআয়ন উছ ল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাক আতাই ছালাতিত লাইলাতিল বারাতিন নাফ-লি, মতাওয়া জ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবা তিশ্ শারীফাতি আকবার।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত বাংলা : আমি শবে বরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ কিবলা মুখী হয়ে আদায় করছি, আল্লাহু আকবর।
শবে বরাতের দোয়া আরবিতে : আল্লাহুম্মাগফিরলি জাম্বি, ওয়া ওয়াসসিলফি দারি ওয়া বারিকলি রিজক।-নাসাই
শবে বরাতের দোয়া বাংলায় : হে আল্লাহ তায়ালা, তুমি আমার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দাও। আমার জন্য আমার থাকার জায়গাকে প্রসস্হ করে দাও। আমার রিজিকে বরকত দান করো।
শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে
শবে বরাতের রাতে যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে অনুগ্রহ কামনা করে প্রত্যেককে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।
আল্লাহ শুধু মাত্র মুশরিক এবং বিদ্বেষ পোষণকারী এই দুই ধরনের লোক বাদে প্রত্যেককে ক্ষমা করে দেন। (হাদিস)
আমরা মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক কিছুই চাই। তবে আমাদের চাওয়ার মাঝে অনেক ক্রটি আছে। এই ত্রুটি দূর করা জরুরি।
একদা এক শবে বরাতের রাতে নবীজি (সা) এত দীর্ঘ সিজদা দিয়েছেলেন যে আয়েশা (রা) মনে করেছিলেন নবিজী মারা গেছেন কি না। এরপর আয়েশা (রা) নবীর বুড়া আঙুল চাপ দিলে নবী সিজদা শেষ করেন। এরপর আয়েশা(রা) কে বলেন, "হে আয়েশা, তুমি কি জান এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের সবকিছু দেওয়ার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করেন বান্দার চাওয়া পর্যন্ত।"
এই রাতে আল্লাহ পৃথিবীতে সব বান্দার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করেন আর বলেন "আমার বান্দারা, কার কি লাগবে, আমি আল্লাহ সব দিব। তোমরা আমার কাছে চাও।"
আল্লাহর কাছে এইভাবে বলে কেঁদে কেঁদে চাইতে হবে, হে আল্লাহ তুমি তো অন্তর্যামী৷ তুমি তো মহান তুমি ক্ষমাশীল। আমি পাপি গুনাহগারী বান্দা। তোমার আমাকে কোন দরকার নাই। কিন্তু আমি পাপি। তুমি দয়া না করলে যে আমার কোনও উপায় নাই। হে আল্লাহ দাওনা আমাকে ক্ষমা করে। তুমি আমাকে ক্ষমা করলে তোমার কিছু কমবে না। আমাকে মাফ করে দাও মাওলা।
শবে বরাতের রোজা কয়টি
যুগযুগ ধরে আমাদের মাঝে শবে বরাতের আগে এবং পরের দিন সহ তিনটি কিংবা একটি রোজা রাখার প্রথা চলে আসছে। অনেকে মনে শবে বরাতের রোজা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগে। যার মধ্যে একটা হলো শবে বরাতের রোজা কয়টি তা নিয়ে।
এ বিষয়ে মুহাম্মদ (সা) বলেন, "তোমরা শাবান মাসের ১৫ তারিখ রাতে বেশি বেশি নফর ইবাদত করো এবং পরদিন রোজা রাখো "।
নবিজ মুহাম্মদ (সা) এর দ্বারা স্পষ্ট করেন তিনি শবে বরাতের সময় ১৫ শাবান নফল ইবাদত এবং ১৬ শাবান রোজা রাখতে বলেছেন। শবে বরাতের রোজা একটি। আর সেটি হচ্ছে শাবাব মাসের ১৬ তারিখ। হাদিসে এসেছে, নবিজি মুহাম্মদ (সা) অন্য এক জায়গায় বেশি বেশি নফল রোজা আদায় করতে বলেছেন।
নবীজি অন্যান্য সময় বাদে বিশেষ ভাবে প্রত্যেক আবরি মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখে রোজা রাখতেন। অন্যদেরকে এই দিনগুলোতে রোজা রাখার জন্য উৎসাহ দিতেন।
সেই হিসেবে শবে বরাতের সময়ে একটি অথবা তিনটি রোজা রাখা যেতে পারে। এছাড়া বেশি বেশি নফল ইবাদত করতে হবে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে সাহায্য চাইতে হবে।
শবে বরাত ২০২৫ ছুটি
শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত হচ্ছে হিজরি শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখে মধ্যবর্তী রাতে পালিত মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ রাত। এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের বিশেষভাবে ক্ষমা করেন। বাংলাদেশে পবিত্র শবে রবাত ১৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে পালিত হবে। শবে বরাতের পরদিন বাংলাদেশে নির্বাহী আদেশ সরকারি ছুটি। এবার এ ছুটি পড়বে ১৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার)
শবে বরাতে ২০২৫ ছুটি: ১৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার)।
লেখকের মন্তব্য :
শবে বরাত ২০২৫ কত তারিখ এই বিষয় সম্পর্কে আজকের এই আর্টেকেল। যার মধ্যে আমরা শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম, শবে বরাতের রোজা, শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ত, শবে বরাতের ফজিলত, শবে বরাতের হাদিস, শবে বরাতের সরকারি ছুটি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
আমাদের আলোচনা ছাড়া কোন প্রশ্ন কিংবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা আপনাদের কমেন্টের সঠিক উত্তর দেওয়া চেষ্টা করব।
আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url