স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ৭টি

আপনি যদি স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই আর্টিকেলে জানাবো যে স্যালাইন খাওয়ার সবকিছু বিস্তারিত তথ্য আপনাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করব। 

আমাদের কাছে অনেকে জানতে চেয়েছেন যে স্যালাইন খাওয়ার ভালো দিক এবং ক্ষতিকর দিক কি? অর্থাৎ স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এই আর্টিকেলে তুলে ধরার চেষ্টা করব। 

সূচিপত্র 

স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আপনারা কি জানেন স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি? স্যালাইন খাওয়ার নিদিষ্ট সময় কখন চলেন আজকের এই আর্টিকেলে বিস্তারিত সবকিছু জেনে নেওয়া যাক। 

উপকারিতা

স্যালাইন খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান করে থাকে। যেমন- পানি শূন্যতার অভাব পূরণ করে থাকে। শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করতে সাহায্য করে থাকে এবং শরীরে সঠিক মাত্রার এনার্জি যোগাতে বিশেষভাবে কাজ করে থাকে। 

যাদের ডায়রিয়াজনিত রোগ রয়েছে তাদের জন্য স্যালাইন খাওয়া খুব উপকারী এবং যারা লো প্রেসার এর রোগী রয়েছেন তাদের স্যালাইন খাওয়ার ফলে পেশার স্বাভাবিক আনতে সাহায্য করে। এছাড়া স্যালাইন খাওয়ার ফলে আপনাদের শরীরের পানি স্বল্পতা ও লবণাক্ত ঘাটটির পূরণ করতে বিশেষভাবে কাজ করে থাকে। বিশেষ করে স্যালাইন ছোট বড় সব শ্রেণীর মানুষ উভয়ে খেতে পারেন। 

  • যেকোন ধরনের পানিশূন্যতায় স্যালাইন অতুলনীয়। তাই আপনি যদি যেকোনো ধরনের পানিশূন্যতায় ভুগে থাকেন তাহলে অবশ্যই স্যালাইন খাবেন। 
  • আপনি যদি পরিশ্রমের কারণে দুর্বলতা অনুভব করেন সেক্ষেত্রে স্যালাইন খেলে আপনি দ্রুত শরীরে শক্তি পাবেন। 
  • আপনার শরীরে যদি লবণের ঘাটতি থেকে থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই স্যালাইন খেতে ভুলবেন না। 
  • আপনি যদি মাথা ব্যথার ভেবে থাকেন তাহলে আপনি স্যালাইন খেতে পারেন। কারণ স্যালাইন মাথা ব্যথা দূরীকরণে সহায়তা করে। 
  • আপনার রক্ত চাপ যদি কম থাকে। তাহলে আপনি আপনার রক্ত চাপ বৃদ্ধি করতে স্যালাইন খেতে পারেন। কারণ স্যালাইন খুব দ্রুত রক্ত চাপ বৃদ্ধি করে।
  • নিয়মিত সঠিক নিয়মে স্যালাইন খেলে আপনার পরিপাক নালী পরিষ্কার থাকে৷ 
  • চর্মরোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে স্যালাইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

অপকারিতা 

আপনারা যদি স্যালাইনের উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা দিক রয়েছে। আপনারা যারা প্রতিদিন স্যালাইন খেয়ে খায়ে থাকেন আসলে এটি ঠিক না। 

প্রতিদিন স্যালাইন খাওয়ার ফলে আপনাদের শরীরের সোডিয়াম এবং ক্লোরাইড ব্যালেন্সের একটা ব্যাপার আছে। কারণ স্যালাইনে রয়েছে অতিরিক্ত লবণের মাত্রা তার কারণে শরীরের সোডিয়াম এবং ক্লোরাইড বেড়ে গেলে আপনাদের কিডনি এবং হার্টের সমস্যা হতে পারে। গ্লুকোজ এবং পাকস্থলীর ক্ষতিকর অতিরিক্ত স্যালাইন খাওয়া। তাই আপনারা অতিরিক্ত স্যালাইন খাওয়ার থেকে বিরত থাকবেন। সবকিছু নিয়মের মধ্যে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। 

এসএমসি ওরস্যালাইন খাওয়ার নিয়ম 

খাবার স্যালাইন সেই পানি-লবণের ঘাটতি পূরণ করে। ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খেতে হয় বিষয়ে সবাই জানি কিন্তু স্যালাইন খাওয়া সঠিক নিয়ম অনেকেই হয়তো জানেন না। 

  • একবার বানানোর পর ওই স্যালাইন ১২ ঘন্টা পর্যন্ত খেতে পারেবন।এর বেশিক্ষণ থাকলে তা পান করা উচিত নয়। 
  • অনেকের ধারণা উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগিদের স্যালাইন খাওয়া উচিত নয়। স্যালাইন মূলত লবণের ঘাটতি পূরণ করার কাজে ভূমিকা রাখে। শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্ম বজায় রাখতে লবণের ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। 
  • ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে শরীর প্রচুর লবণ হারাই। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীর ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খেতে হবে।এতে লবণের আধিক্য হবে বা রক্তচাপ বাড়বে না। 
  • স্যালাইনে গ্লুকোজের পরিমাণ ২০ গ্রামের বেশি নয়। তাই ডায়রিয়ায় স্যালাইন খেলে ডায়বেটিসের রোগীর রক্তে শর্করা বাড়বে এমন ধারণা ঠিক না। 
  • গরমে ঘামের সঙ্গে শরীরের লবণ বেরিয়ে যায়। এর ফলে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। পানিস্বল্পতা গরমের খুবই সাধারণ সমস্যা হলে অবহেলা করলে তা মারাত্মক হয়ে যেতে পারে। এ সময়ে তাই দুর্বল লাগলে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন। 

স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আজকের এই আর্টিকেল। যার পরবর্তী অংশে আমরা আলোচনা করব খালি পেটে ওরস্যালাইন খাওয়া যাবে কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। বিস্তারিত জানতে সম্পন্ন আর্টিকেলটি পড়ুন।

খালি পেটে ওরস্যালাইন খাওয়া যাবে কি 

স্যালাইন ডায়রিয়া রোগীদের জন্য। স্যালাইনে সোডিয়াম ও ক্লোরাইড থাকে। শুধু পিপাসা মেটাতে স্যালাইন খেলে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হবে। কারও কারও শরীরে পানি জমতে পারে।কিডনি ও হৃদরোগীদের অকারণে স্যালাইন খাওয়া বিপজ্জনক। 

খালি পেটে স্যালাইন খাওয়া উচিত না। সাধারণত ১২ থেকে ২ টার মধ্যে স্যালাইন খাওয়া উপকারী। স্যালাইন খাওয়ার আগে অবশ্যই কিছু খেতে হবে। 

গর্ভাবস্থায় ওরস্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা 

স্যালাইন খাওয়ার যেহেতু অনেক উপকারি দিক রয়েছে। তাই গর্ভাবস্থায় নিঃসন্দেহে এটি খেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়া যাবে বলে অতিরিক্ত পরিমাণ খাবেন না। গর্ভ অবস্থায় যদি কেউ অসুস্থ থাকে শারীরিক দুর্বলতা, ডায়রিয়া, জ্বর বমি হওয়া, পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে তাহলে আপনি স্যালাইন খেতে পারবেন। 

শরীর ক্লান্তি ভাব ও পানি শূন্যতা দূরীকরণে স্যালাইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই একজন গর্ভবতী মহিলা নিঃসন্দেহে সঠিক পরিমাণ স্যালাইন খেতে পারবেন।গর্ভাবস্থায় স্যালাইনের পাশাপাশি ডাবের পানিও খেতে পারেন। 

স্যালাইন খেলে কি ওজন বাড়ে 

অতিরিক্ত স্যালাইন খেলে রক্তে বাড়তি সোডিয়াম ক্লোরাইড মিশে ইলেক্টোলাইট ভারসাম্যহীন তৈরি করে৷ রক্তে লবণের পরিমাণ বেড়ে হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। 

স্যালাইন নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত স্যালাইন গ্রহণ করা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত স্যালাইন খেলে ওজন বৃদ্ধি পায় পাশাপাশি আরও অনেক সমস্যা দেখা দেয়। 

ওরস্যালাইন খাওয়ার নিয়ম 

স্যালাইন আমাদের জন্য একটি উপকারী জিনিস। বিশেষ করে ডায়রিয়া এবং যেকোনো ধরনের পায়খানা জনিত পানিশূন্যতা ছাড়াও অন্যান্য পানি শূন্যতার ক্ষেত্রে স্যালাইন এর কোন বিকল্প নেই। স্যালাইন আপনার শরীরের পানির শূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে থাকে। তাহলে চলুন জেনে নেই ওরস্যালাইন খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত -

  • খাবার স্যালাইন তৈরি করার সময় হতে আপনি ১২ ঘন্টা পর্যন্ত খেতে পারবেন। বাসায় তৈরি করা স্যালাইন ৬ ঘন্টা পর্যন্ত খেতে পারবেন। 
  • বয়স দুই বছরের কম হলে সেক্ষেত্রে প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ৫০ থেকে ১০০ মিলি স্যালাইন মিশানো পানি খেতে হবে। 
  • বয়স দুই থেকে দশ বছরের মধ্যে হলে সেক্ষেত্রে পানি শূন্যতা পূরণ করার জন্য ১২৫-২৫০ এমএল স্যালাইন মিশানো পানি খেতে হবে। 
  • বয়স ১০ বছরে বেশি হয় সেক্ষেত্রে পানি শূন্যতা পূরণের জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ এমএল এবং স্যালাইন মিশানো পানি খেতে হবে। 

স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আজকের এই আর্টিকেল। যার পরবর্তী অংশে আমরা আলোচনা করব স্যালাইন খেলে কি পায়খানা কষা হয় এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা। বিস্তারিত জানতে সম্পন্ন আর্টিকেলটি পড়ুন।

স্যালাইন খেলে কি পায়খানা কষা হয় 

অল্প পানিতে বেশি ঘন করে স্যালাইন বানালে তা হাইপারটনিক হয়ে যাবে। অর্থাৎ স্যালাইনের ঘনত্ব শরীরের ভেতরের তরলের ঘনত্বের চেয়ে বেশি হয়ে যাবে। এই ঘন স্যালাইন খেলে কোষের ভেতরের পানি সমতার জন্য কোষের বাইরে চলে আসে। এতে শরীর আরও পানি হারাতে থাকবে।

পানিশূন্যতা দেখা যায় যার ফলে পায়খনা কষা হয়। তাই স্যালাইন খাওয়া সঠিক নিয়ম এবং স্যালাইন তৈরির সঠিক নিয়ম মেনে চলতে হবে। তাহলে আপনি ভালো ফলাফল পাবেন। 

ওরস্যালাইন খেলে কি হয় 

খাবার স্যালাইন বা ওরস্যালাইন হচ্ছে ডায়েরিয়া বা যে কোন পানি স্বাল্পতা রোগে একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবন রক্ষাকারী উপাদান। ওরস্যালাইন বা খাবার স্যালাইন হচ্ছে শরীরের পানিস্বল্পতা ও লবণঘাটতি পূরণ করার জন্য মুখে গ্রহণযোগ্য লবণ ও গ্লুকোজ মিশ্রিত পানি। 

ডায়রিয়া বা কলেরায় ঘন ঘন পাতলা পায়খানা এবং অতি গরমে ঘামের কারণে অতি অল্প সময়ে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। ফলে সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের ঘাটতি মানবদেহেরর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকি। এসমস্ত রোগে যে স্যালাইন মুখে খেতে হয় সেটাই ওরস্যালাইন বা খাবার স্যালাইন। 

স্যালািন খেলে কি গ্যাস বাড়ে 

স্যালাইন খাওয়ার ফলে গ্যাস বাড়ে না। তবে আপনারা ফাঁকা পেটে স্যালাইন খাওয়ার চেষ্টা করবেন না। কারণ পেটে খাবার না থাকলে আপনাদের শরীর খারাপ হতে পারে এবং বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে যার ফলে আপনাদের গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

তাই আপনারা স্যালাইন খাওয়ার সময় ঠিক দুপুর ১২ টা থেকে ২ দিকে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাহলে আপনাদের কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না এবং কোন প্রকারের গ্যাসের সমস্যাও হবে না। 

যাদের অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তারা চাইলে নিয়মিত স্যালাইন খেতে পারবেন তবে কিনা স্যালাইনের চাইতে বাসায় তৈরি করে খাওয়াটাই উচিত। কারণ কেনা স্যালাইনে বিভিন্ন প্রকারের ফ্লেভারের কেমিক্যাল দেওয়ার কারণে পরবর্তীতে আপনাদের গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। তাই আপনারা প্রতিনিয়ত বাসায় তৈরি করে স্যালাইন খাওয়ার চেষ্টা করবেন। 

 লেখকের মন্তব্য 

স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে লিখিত আর্টিকেলে আমরা আপনাদের স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এছাড়া আমরা আরো আলোচনা করার চেষ্টা করেছি স্যালাইন তৈরি করার সঠিক নিয়ম, গর্ভাবস্থায় স্যালাইন খাওয়ার সঠিক নিয়ম, স্যালাইন খেলে কি গ্যাস হয় ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। 

আমাদের আলোচনা ছাড়া কোন প্রশ্ন কিংবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমারা আপনাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া চেষ্টা করব। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url