গ্যাস্ট্রিক দূর করতে মেথি খাওয়ার নিয়ম-মেথি খাওয়ার উপকারিতা ১০টি
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে মেথি খাওয়ার নিয়ম এবং ওজন কমাতে মেথি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পন্ন আর্টিকেলটি পড়ুন। এই আর্টিকেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে আপনি কিভাবে মুক্তি পাবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
পাশাপাশি মেথির ক্ষতিকর দিক, মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, গ্যাস্ট্রিক দূর করতে মেথি খাওয়ার নিয়ম, খালি পেটে মেথি ভেজানো জল খেলে কি হয় ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
সূচিপত্র
মেথির ক্ষতিকর দিন
মেথির উপকারীতা অনেক। তার পাশাপাশি মেথির বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। মেথি খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামান্য অপকারিতাও আছে সেগুলো হলো -
- মেথি শরীরের চিনির মাত্র কমিয়ে দেয় সেজন্য অতিরিক্ত মেথি খেলে ডায়বেটিস রোগীদের জন্য খুবই বিপদজনক হতে পারে।
- মেথি খেলে মুখের ভিতর তিতা স্বাদ তৈরি হয় যা মাথা ঘোরাসহ বমি বমি সমস্যা হতে পারে।
- মেথি রক্ত জমাট বাধতে বাধা তৈরি করে ফলে যাদের রক্ত পাতলা তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে।
- অতিরিক্ত মেথি খাওয়ার ফলে পেটে এসিডেটি, পেট ব্যথাসহ অন্যান্য সমস্যা তৈরি হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিকের জন্য কি খাওয়া উচিত
অতিরিক্ত পরিমাণে মসলাযুক্ত খাবার ও তেল জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। অনেক মানুষ আছে যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। অনেক মানুষ আছে যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন গ্রহণ করে থাকে।
ঘরোয়া উপায়ে আপনি যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে সমাধান পেতে চান তাহলে নিচে উল্লেখিত খাবারগুলো গ্রহণ করতে পারেন। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য যেসব খাদ্য আপনি গ্রহণ করতে পারেন তা হলো -
গরুর খাঁটি দুধ : গরুর খাঁটি দুধ অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্য যা আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করাসহ শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের কাজ করে থাকে। আপনি যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে চান তাহলে প্রথমে দুধ গরম করে ঠান্ডা করে তারপর খেতে পারেন।
টক দই : মানুষের দেহের হজম শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য টক দই অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কেননা মানুষ খাদ্য গ্রহণের পর সেই খাদ্য যদো দ্রুত হজম হয়ে যাবে ততো শরীরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে যাবে।
আমড়া : গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য নিয়মিত আমড়া খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। কেননা হজম করতর আমড়া অত্যন্ত উপকারী উপাদান হিসেবে কাজ করে। শুকনো আমড়া চিবিয়ে খাওয়ার ফলে বদহজম ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যায়।
পাকা পেঁপে : চিকিৎসকের মতে গ্যাস্ট্রিক হওয়ার প্রধান সমস্যা হলো খাবার দ্রুত হজম না হওয়া। পাকা পেঁপে খুব দ্রুত খাবার হজম করার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
শসা : মানুষের দেহকে সুস্থ রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন কেননা অনেক সময় পানির ঘাটতির কারণে পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়। নিয়মিত শসা খাওয়ার ফলে শরীরে অনেক অংশে পানির ঘাটতির পরিমাণ কমে আসে কেননা শসাতে ৯৭% পানি থাকে।
জিরা : অতিরিক্ত খাবার খাওয়া ফলে হজম করতে জিরা খেতে পারেন। কারণ খুব দ্রুত খাবার হজম হয়ে গেলে গ্যাস্ট্রিকের কোন সমস্যা দেখা দিবে না।
আদা : আদার রস গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আদার রস ছাড়াও আদা কুচি কুচি করে কেটে চিবিয়ে খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করা সম্ভব।
মৌরির পানি : মৌরির পানি প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২-৩ দিন সেবন করুন তাতে করে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে আসবে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। কেননা মৌরির পানি একটি ভেষজ উপাদান যা গ্যাস্ট্রিক দূর করতে সাহায্য করে।
মথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
নিয়মিত মেথি খেলে শরীরের নানা ধরনের উপকার হয়ে থাকে। কেননা মেখিতে আছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ। মেথি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো -
- স্টেরিও ডাল সেপোনিনস উপাদান থাকায় শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে।
- মেথিতে থাকা পটাশিয়াম শরীরে অতিরিক্ত লবণ কমাতে সাহায্য করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- যাদের শরীরে ব্লাড সুগারের মাত্রা বেশি রয়েছে তারা নিয়মিত মেথি খেলে রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
- মেথি হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। মেথিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় হজমকার্যে সহায়তা করে।
- মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে যা ক্ষুধা কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করে।
- অতিরিক্ত মেথি খাওয়ার ফলে জ্বর ও সর্দির কমিয়ে দেয়।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- চুলের যত্নে খুবই উপকারী মেথি বীজ নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল লম্বা ও ঘন হয়।
খালি পেটে মেথি ভেজানো জল খেলে কি হয়
রোজ সকালে খালি পেটে মেথি ভেজানো জল খেলে সুফল পাওয়া যায়। সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ : মেথি ভেজানো জল ডায়াবেটিকদের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে টাইপ ২ ডায়াবিটিস থাকলে মেথি ওষুধের মতো কাজ করে। রোজ সকালে যদি মেথির জল খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা যায় তাহলে শর্করা বিপদসীমা পেরোবে না।
হজমের সমস্যা দূর : মেথি হজমশক্তি উন্নতি করে। হজমের গোলমালে সারা বছর যারা ভোগেন তারা মেথির উপর ভরসা করতে পারেন।
ওজন কমাতে : ফাইবার বেশি থাকার কারণে মেথি হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মেথির জল দীর্ঘক্ষণ পেট ভর্তি রাখতে সহায়তা করে। শরীরে ক্যালোরি জমতে দেয় না। মেথি গুড়ো জলে গুলে খেলে ওজন কমে।
চুলের জন্য ভালো : চুল আরও উজ্জ্বল ও ঘন করতে রোজ মেথি ভেজানো জল খান। এটি আপনার চুলকে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
ত্বক ভালো রাখে : ত্বকের জন্য খুব উপকারী মেথি ভেজানো জল। যদি আপনি রোজ মেথি ভেজানো জল খান তাহলে আপনার মুখে ব্রণ ও বলিরেখা একদমই থাকবে না।
পুরুষের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, মেথির মধ্যে শত শত ওষুধি গুণাগুণ রয়েছে। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। এছাড়াও মেথির আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। প্রধানত মেথি পুরুষের জন্য খুবই উপকারী একটি ভেষজ।
এক গবেষণায় দেখা যায়, মেথি পুরুষের বীর্য শুক্রাণুর পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। একই সাথে পুরুষের শরীরে যে টেস্টোস্টেরেন হরমোন রয়েছে তা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। টেস্টোস্টেরেন হরমোন পুরুষের সেক্সটাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং মূলত পুরুষদের পুরুষত্বকে প্রকাশ করে থাকে।
এছাড়া সহবাসের সময় পেনিসের ইরেকশন কে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই আপনার যদি এই ধরনের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি মেথি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। ছোট্ট এই মেথি দানার মধ্যে এমন অনেক উপাদান রয়েছে জন্য খেলে পুরুষদের শরীরে টেস্টোস্টেরেন হরমোনের পরিমাণ খুব সহজে বৃদ্ধি পায়।
তাছাড়া আপনি যদি একটানা দীর্ঘদিন মেথি খেয়ে থাকেন তাহলে সুফল পাবেন। আপনি যদি একটানা তিন মাস মেথি খেতে পারেন তাহলে এর উপকারিতা আপনারা শরীরে স্পষ্ট অনুভব করতে পারবেন। তবে একটানা তিন মাসের বেশি মেথি না খাওয়া ভালো।
ওজন কমাতে মেথি খাওয়ার নিয়ম
ওজন বৃদ্ধির সমস্যা এখন অনেকের। মেথি বীজের চা ওজন কমাতে এবং ডায়াবেটিসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া হজম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের রাখার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত কার্যকর।
সামান্য পানি দিয়ে কিছু মেথি বীজ বেটে নিন। একটি পাত্রে খানিকটা পানি ফুটিয়ে নিয়ে তার সঙ্গে ওই মেথি পেস্ট মিশিয়ে দিন। চাইলে এর সঙ্গে কিছু ভেষজ মশালা দেওয়া যেতে পারে। যেমন- আদা বা দারচিনি। তারপর পাত্র ঢাকনা দিয়ে ঢেকে একসঙ্গে সবকটি মশলা অন্তত ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। প্রতিদিন খালি পেটে এই চা খেলে ওজন কমে যাবে।
শরীরের আকর্ষণীয় আকৃতি পেতে ও দ্রুত ওজন কমাতে মধুর সঙ্গে মেথি বীজ মিশিয়ে বানানো চা চমৎকার কার্যকরী। প্রথমে মেথি বীজ গুড়া করে নিতে হবে৷ সেই মেথি গুঁড়া পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে ঠান্ডা করতে হবে এবং এভাবে অন্তত ৩ ঘন্টা রেখে দিতে হবে। তারপর পানি ছেকে নিয়ে তাতে লেবুর রস ও মধু যোগ করতে হবে। ভালো ফলাফল পেতে এই মিশ্রণটি প্রতিদিন সকালে খেতে হবে।
গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম
বর্তমান সময়ে সকল বয়সের মানুষের গ্যাস্ট্রিক রোগের ভুক্তভোগী। মানুষের শরীরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো ভেজাল খাবার, ফরমালিন মেশানো খাবার এবং কীটনাশক মেশানো খাবার। চিকিৎসকের মতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সেজন্য গ্যাস্টিকের সমস্যাকে কেউ হালকা ভাবে নিবেন না। ঘরোয়া নানান উপায়ে গ্যাস্ট্রকের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। নিজের গ্যাস্ট্রিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতিদিন মেথি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন কেননা মেথিকে বিভিন্ন রোগের মহা ঔষধ বলা হয়ে থাকে।
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে মেথি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো, এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ সমপরিমাণ মেথি ভিজিয়ে রাখার ১০-১৫ মিনিট পর সেটা টান করুন। মেথি পান করতে সমস্যা হলে চিনি, মধু অথবা মিষ্টি জাতীয় খাবার মিশিয়ে পান করুন। আপনি চাইলে লেবুর রস অথবা আখের রসের সাথে মেথি মিশিয়ে খেতে পারেন।
আবার রান্না করা খাবারের সাথে মিশিয়ে মেথি খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। পাশাপাশি শুধু মেথি প্রতিদিন রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খালি পেটে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা চিরতরে দূর করা সম্ভব।
গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঔষধ
যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা ঘরোয়া উপায়ে গ্যাস্ট্রিক দূর করতে না পারলে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে গ্যাস্ট্রিক দূর করার জন্য প্রাথমিক অবস্থায় আপনি যেসব ওষুধ সেবন করতে পারবেন সেগুলো হলো -
- সেকলা
- সার্জেল
- ওমিপ্রাজল
- ইসিম্রোপাজল
- রেনিটিডিন
- প্যানটোনিক্স
- লোসেকটিল
আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url