সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা ও অপকারীতা ১০টি

সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা ও অপকারীতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন আজকের আর্টিকেলে৷ আমরা আমাদেরকে বলব কিভাবে সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করতে হয় এবং অতিরিক্ত ব্যবহার করলে কি কি অপকারিতা রয়েছে। 

সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা ও অপকারীতাগুলো কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সাথে থাকুন। 

সূচিপত্র 

সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা

সূর্যমুখী তেলের উপকারতা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে কারণ সূর্যমুখী তেলে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। সূর্যমুখী তেল ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা হয়। আসুন সূর্যমুখী তেলের উপকারিতার সাথে পরিচয় হই। 

হাড়ের সমস্যা সমাধান : সূর্যমুখী তেলে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করে সাধারণত জয়েন্টে ব্যথা, পেটের আলসার, বুকজ্বালা এবং হাঁপানির চিকিৎসা হয়৷ 

ত্বকের যত্নে সূর্যমুখী তেল : সূর্যমুখী তেলে লিনোলিক অ্যাসিড থাকে, যা ত্বকে মেলানিনের উৎপাদন কমায়৷ এছাড়া সূর্যমুখী তেল সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। 

সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করে ব্রণ, ফুসকুড়ি, ব্ল্যাকহেডস এবং ব্রণের দাগ দূর হয়। সূর্যমুখী তেলের লিনোলিক অ্যাসিড ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে, ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের কোমলতা ধরে রাখে এবং উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। 

শরীরের ব্যথা এবং দাঁতের ক্ষয় : সূর্যমুখী তেলে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ। যা শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়া ভিটামিন ই সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ : সূর্যমুখী তেলে রয়েছে ওমেগা৬ এবং ফ্যাটি অ্যাসিড। এই তেল ব্যবহারে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। 

ওজন কমায় : যারা ওজন কমাতে ডায়েট করেন। এই তেল আপনি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারবেন। ভালো কোলেস্টেরল থাকে। 

সূর্যমুখী তেলের অপকার 

সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা যেমন রয়েছে পাশাপাশি  অপকারিতা রয়েছে। কিছু সূর্যমুখী তেল আমাদের শরীরের জন্য মোটেও উপকারী নয়। এই তেল ওমেগা৬ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। যা আমাদের শরীরে প্রদানের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। সূর্যমুখী তেলেও অ্যালডিহাইড থাকে। এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য আরও ঝুঁকি বাড়ায়।

  • সূর্যমুখী বীজের বেশি ব্যবহার বমি, পেটে ব্যথা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে। 
  • সূর্যমুখী বীজ থেকে অ্যালার্জি যুক্ত ব্যক্তির বমি, ফুসকুড়ি, শ্বাস নিতে অসুবিধা, মুখের চারপাশে ফুলে যাওয়া এবং চুলকানির মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। 
  • সূর্যমুখীর বীজে ক্যালোরি বেশি থাকে। অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ওজন বাড়তে পারে। অনেক বেশি হার্ট-স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া আপনার হার্টের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। 
  • সূর্যমুখী বীজে অল্প পরিমাণে ক্যাডমিয়াম থাকে। অনেক বেশি বীজ খেলে আপনার কিডনির সমস্যা হতে পারে। 
উপরে আমরা সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এখন আমরা সূর্যমুখী তেলের দাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। 

সূর্যমুখী তেলের দাম ২০২৪

সূর্যমুখী তেলের দাম কত তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এই অংশে। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে বাজারে উদ্ভিজ্জ তেল, সয়াবিন ও পাম তেল সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হয়। কিন্তু এখন সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম নির্ধারণের কথা ভাবছে না সরকার।

ফলে বিশ্ব বাজারে দাম কমলেও লাভবান হচ্ছে না ভোক্তারা। তাই সয়াবিন ও পাম তেলের মতো সূর্যমুখী তেলের দামও সরকার নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেন। ১৯ এপ্রিল বিশ্ববাজারে সূর্যমুখী তেলের দাম প্রতি টন ৮৬৭ ডলার বিক্রি হয়েছে। মার্চ এবং এপ্রিল ২০২৪ সালে এটি ৯৭৫ টাকা থেকে ১০২০ টাকা বিক্রি হয়েছে। 

২০২২ সালের মে মাসে সূর্যমুখী তেলের দাম টন প্রতি ২১০০ ডলার বেড়েছে। বাজারে আলিতালিয়া, কিংস, গোল্ডেন, রানধুনি এবং ভিটা সহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের তেল পাওয়া যায়। তাদের কারখানাগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা সূর্যমুখী বীজ থেকে তেল উৎপাদন করে অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ করে। 

বর্তমানে সূর্যমুখী তেলের একটি ৫ লিটারের বোতল কিনতে ২০০০ টাকা খরচ হয়। ২০২২ সালে সূর্যমুখী তেলের দাম নির্ভর করে বোতলের উপর। ১৬০০ থেকে ১৮৭৫ TND পর্যন্ত পাওয়া যেত। এক বা দুই বছর আগে সূর্যমুখী তেলের একটি ৫ লিটারের বোতল বাজারে পাওয়া যেত। 

সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা 

সূর্যমুখী বীজের উপকারীতা বিশেষজ্ঞদের মতে, সূর্যমুখীর বীজে বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে। থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন ই এবং ফলিক এসিড যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। 

হাড় মজবুত করে : সূর্যমুখী বীজে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করে সাধারণত জয়েন্টে ব্যথা, পেটের আলসার, বুকজ্বালা এবং হাঁপানির চিকিৎসা হয়৷ 

ক্যান্সার প্রতিরোধ : এই বীজগুলো উচ্চ মানের ফাইটোস্টেরল এবং লিগনান রয়েছে যা ক্যান্সার বিরোধী প্রভাব ফেলে। এই উপাদানগুলো শরীরে ক্যান্সার কোষ তৈরিতে বাধা দেয়। 

বয়সে দাগ দূর করে : এটিতে অ্যান্টি এজিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ত্বকে বার্ধক্যের লক্ষণ দেখাতে বাধা দেয়। এতে থাকা ভিটামিন ই এবং বিটা ক্যারোটিন ত্বকের রাখা তরুণ উজ্জ্বল করে৷

চুল পড়া রোধ করে : সূর্যমুখী বীজে ভিটামিন B-6 থাকে, যা মাথার ত্বকে অক্সিজেন দিয়ে চুল পড়া রোধ করে এবং নতুন চুল গাজাত সাহায্য করে। 

ত্বক নরম রাখে : যেহেতু এটি সূর্যমুখী ফ্যাটি এসিডের একটি ভালো উৎস তাই এটি ত্বককে কোমল রাখে। 

কোলেস্টেরল হ্রাস : এই বীজে ফাইটোস্টেরল থাকে যা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এটি আপনার হার্টকে সুস্থ রাখে। 

মানসিক স্বাস্থ্য : সূর্যমুখী বীজে ট্রিপটোফ্যান থাকে, একটি অ্যামিনো এসিড যা আপনার শরীরকে সেরোটোনিন তৈরি করতে সাহায্য করে। সেরোটোনিন একটি পদার্থ যা ক্লান্তি ও উদ্বেগ দূর করে।

সূর্যমুখী তেলের দাম বাংলাদেশ 

সূর্যমুখী তেলের উপকারতা ও অপকারীতা নিয়ে আজকের এই পোস্ট। যার মধ্যে আমরা এই অংশে আলোচনা করব সূর্যমুখী তেলের দাম সম্পর্কে। সূর্যমুখী তেলের দাম প্রতি লিটারে বাংলাদেশের হিসেবে ৩০০-৩৫০ টাকা। তবে বিভিন্ন ব্রান্ডের তেলের দাম বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। 
  • কিংস ব্রান্ডের দুই লিটারের বোতলজাত সূর্যমুখী তেল ৮৫০ টাকায় এবং পাঁচ লিটার দুই হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 
  • গোল্ডেন ড্রপ সূর্যমুখী তেল পাঁচ লিটার দুই হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 
  • ভিটা কেয়ার ব্রান্ডের সূর্যমুখী তেল পাঁচ লিটার বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার পঞ্চাশ টাকায়। 
  • অলিটালিয়া ব্রান্ডের এক লিটার সূর্যমুখী তেল বিক্রি হচ্ছে ৪২৫ টাকায়, দুই লিটার ৮৫০ টাকায় ও তিন লিটার ১২৬০ টাকায় এবং পাঁচ লিটার সূর্যমুখী তেল ১৯৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 
  • রাধুনি ব্রান্ডের এক লিটার সূর্যমুখী তেল বিক্রি হচ্ছে ৪৩০ টাকায় এবং পাঁচ লিটার বোতল তেল ২০২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 
দেশে সূর্যমুখী তেল আমদানি ও বাজারজাত করে বাংলাদেশ অ্যাডিবল অযেল, ফেয়ার ফুড অ্যান্ড লাইফস্টাইল, প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। 

সূর্যমুখী তেলের দাম ১ লিটার

সূর্যমুখী তেলের উপকারতা ও অপকারীতা নিয়ে আজকের এই পোস্ট। যার মধ্যে আমরা এই অংশে আলোচনা করব সূর্যমুখী তেলের দাম ১ লিটার কত টাকা সেই বিষয়ে। সূর্যমুখী তেলের দাম প্রতি লিটারে বাংলাদেশের হিসেবে ৪০০-৪৫০ টাকা। তবে বিভিন্ন ব্রান্ডের তেলের দাম বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। অলিটালিয়া ব্রান্ডের এক লিটার সূর্যমুখী তেল বিক্রি হচ্ছে ৪২৫ টাকা,রাধুনি ব্রান্ডের এক লিটার সূর্যমুখী তেল বিক্রি হচ্ছে ৪৩০ টাকা। 

চুলের যত্নে সূর্যমুখী তেল 

সূর্যমুখী বীজের তেল ত্বকের মতো আপনার চুলের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এই তেলে পাওয়া প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড, পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো আপনার চুলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

এই বহুমুখী তেল আপনার চুলের উজ্জ্বলতা ও গঠণ বজায় রাখে এবং প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন৷ গোসলের আগে সপ্তাহে একবার স্ক্যাল্প ম্যাসাজ হিসেবে সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করতে পারেন৷ এটি চুলের পুষ্টি জোগায় এবং ভাঙা প্রতিরোধ করে। 

সূর্যমুখী বীজের অপকারিতা

বাজারে খাওয়ার জন্য যে সূর্যমুখী বীজ পাওয়া যায় তা লবণাক্ত। সূর্যমুখী ফুলের পুরাতন বীজ খেলে ডায়রিয়া পেট ব্যথা অথবা পেট জ্বালার মত সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত সূর্যমুখীর বীজ খেলে বদহজম ও গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত সূর্যমুখীর বীজ খেলে বদহজম ও গ্যাসের মত সমস্যা হতে পারে। যাদের এলার্জি রয়েছে তাদের সূর্যমুখী বীজ সাবধানে খেতে হবে। 

সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার জন্য অনেকের এলার্জি বেড়ে যায়। সূর্যমুখী বীজ পর্যাপ্ত ফাইবার আছে। যার কারণে বেশি পরিমাণ বীজ খেলে গ্যাস পেট ব্যথা করতে পারে। 

সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম 

সূর্যমুখী বীজ অত্যন্ত উপকারী পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বীজ। এ বীজে উপকারীতা অনেক বেশি। সাধারণত সূর্যমুখী বীজ ভেজে খাওয়া যেতে পারে। সূর্যমুখী বীজ ভেজে নিয়ে আবসর সময় গল্পের সময় খাওয়া যায়। সূর্যমুখী বীজ খোসা সরিয়ে নিতে হবে অতঃপর বিভিন্ন ধরনের মসলা ছিটিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে বীজগুলো খাওয়া যেতে পারে। 

সূর্যমুখীর বীজ খেতে অনেক সুস্বাদু। এছাড়া সবসময় বীজ কাছে রাখবেন মাঝেমধ্যে মুখে দিয়ে একটা করে বীজ খেতে পারেন। এছাড়াও একটু বেশি পরিমাণ বীজ একবারে গুড়ো করে নেন। বীজের গুড়া দই অথবা অন্যান্য ফল খাওয়ার সময় ছিটিয়ে দিয়ে খাবেন। সূর্যমুখী বীজের গুড়া সুপ কেক ইত্যাদি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। 

এছাড়াও সূর্যমুখী বীজ ভিজিয়ে অংকুর বাহির করে খেতে পারেন। এভাবে খেলে উপকারীতা বেশি। মাছ বা মাংস বা অন্যান্য সবজি রান্না করতে সূর্যমুখী বীজের গুড়া ছিটিয়ে দিয়ে খেতে পারেন। যেই ভাবেই খান না কেন প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ আউন্স বীজ খাবেন। 

লেখকের মন্তব্য 

আজকের বিষয় সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা ও অপকারীতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সূর্যমুখী উৎপাদন আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা পালন করবে। সূর্যমুখী বীজ যেমন পুষ্টিগুণ সম্পন্ন আবার সূর্যমুখীর তেলও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। 

তাই আসুন সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা ও অপকারীতা সম্পর্কে সকল তথ্য জানি। আমাদের আলোচনা ছাড়া কোন প্রশ্ন কিংবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমারা আপনাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া চেষ্টা করব। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url