আপনি যদি ইউরিন ইনফেকশনের ডায়েট চার্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। শরীরে ইউরিক এসিডের সমস্যা থাকলে দেখে - বেছে খাবার খেতে হবে। জেনে নিন খাবারগুলোর নাম যা ইউরিন এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে।
খাবার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যেমন ইউরিন ইনফেকশনের ডায়েট চার্ট মনে চললে আধিক্য কমানো সম্ভব। পাশাপাশি বিশেষ কিছু খাবার প্রতিদিনের তালিকাতে যোগ করলে শরীর ভালো থাকবে। নিচে ইউরিন এসিডের ডায়েট চার্ট তৈরি করা হয়েছে।
সূচিপত্র
ইউরিন ইনফেকশন কী?
আমাদের শরীর থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত পানি প্রস্রাব হিসেবে বেরিয়ে যায়। প্রস্রাব বেরিয়ে যাওয়ার এই ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত অঙ্গগুলো নিয়ে আমাদের মূত্রতন্ত গঠিত। মূত্র তন্ত্রের মধ্যে থাকে দুটি কিডনি, দুটি ইউরেটার, একটি মূত্রথলি বা ব্লাডার ও একটি মূত্রনালী।
মূত্র তন্ত্রের কোনো অংশে জীবাণুর সংক্রমণ হলে সেটিকে ইউরিন বা প্রস্রাবের সংক্রমণ বলে। ডাক্তারি ভাষায় একে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা ইউটিআই বলা হয়।
ইউরিক ইনফেকশনের লক্ষণ
ইউরিন ইনফেকশন খুবই পরিচিত একটি রোগ। এই রোগে প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া অথবা ঘনঘন প্রস্রাব হওয়াসহ নানান রকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে এবং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে এই রোগ থেকে সহজেই পরিত্যক্ত পাওয়া সম্ভব। ইউরিন ইনফেকশনের সবচেয়ে কমন লক্ষণগুলো মধ্যে রয়েছে -
প্রস্রাবের সময়ে ব্যথা অথবা জ্বালাপোড়া হওয়া।
স্বাভাবিকের চেয়ে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।
রাতে বারবার প্রস্রাবের বেগ আসা
অস্বাভাবিক গন্ধযুক্ত অথবা ঘোলাটে প্রস্রাব হওয়া।
তলপেটে ব্যথা হওয়া
প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া
কোমরের পেছনে পাঁজরের ঠিক নিচের অংশে ব্যথা হওয়া
জ্বর আসা কিংবা গা গরম লাগা
শরীরের তাপমাত্রা ৩৬ সেলসিয়াস বা ৯৬.৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর চেয়ে কমে যাওয়া
ক্লান্তি ও বমি বমি লাগা
আমাদের আর্টিকেলের বিষয়ে হচ্ছে ইউরিন ইনফেকশনের ডায়েট চার্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। এই অংশে আমরা ইউরিন ইনফেকশনের কারণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ইউরিন ইনফেকশনের কারণ
সাধারণত পায়খানায় থাকা বিভিন্ন জীবাণু মূত্র তন্ত্রে প্রবেশ করে ইউরিন ইনফেকশন ঘটায়। প্রস্রাবের রাস্তা বা মূত্রনালী দিয়ে জীবাণু প্রবেশ করে। এছাড়া নারীদের মূত্র নালী পায়ুপথের খুব কাছাকাছি অবস্থিত ফলে ব্যাকটেরিয়া পায়ুপথের খুব কাছাকাছি অবস্থিত। ফলে ব্যাকটেরিয়া পায়ুপথ থেকে মূত্রনালীতে প্রবেশ করে প্রস্রাবের সংক্রমণ ঘটানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেসব কারণে ইউরিন ইনফেকশনের সম্ভবনা বেড়ে যায় -
পর্যাপ্ত পানি পান না করা
মূত্র তন্ত্রের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে এমন রোগ যেমন : কিডনিতে পাথর
যৌনাঙ্গ পরিষ্কার ও শুকনো না রাখা
যেকোনো কারণে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। যেমন - ডায়বেটিস বা এইচআইভি আক্রমণ হলে
মূত্রথলি পুরোপুরি খালি করতে বাধা সৃষ্টি করে এমন রোগ হলে। যেমন : পুরুষদের প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া, শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা স্নায়ুতন্ত্রের অসুখ।
মাসিক চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলে। এক্ষেত্রে ইস্টোজেন নামক হরমোন কমে যাওয়ার সংক্রান্ত প্রবণতা বেড়ে যায়।
যৌন সহবাস করলে
প্রস্রাবের রাস্তায় নল বা ক্যাথেটার পরানো থাকলে।
আমাদের আর্টিকেলের বিষয়ে হচ্ছে ইউরিন ইনফেকশনের ডায়েট চার্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। এই অংশে আমরা ইউরিন ইনফেকশনের চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ইউরিক ইনফেকশনের চিকিৎসা
ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দিলে সেগুলো উপেক্ষা না করে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তার প্রস্রাব পরীক্ষা করানোর পাশাপাশি প্রয়োজনবোধে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন।
অ্যান্টবায়োটিকের সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করা গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষণগুলো কমে আসতে শুরু করলে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধের কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। সাধারণত ওষুধ খাওয়া শুরু করার দুই তিন দিনের মধ্যে উন্নতি হবে। যদি ওষুধের কোর্স সম্পন্ন হওয়ার পরেও লক্ষণের উন্নতি না হয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
ইউরিন ইনফেকশনের ঘরোয়া চিকিৎসা
ইউরিন ইনফেকশন তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলে রোগী কয়েকদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠে। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলার পাশাপাশি ঘরোয়াভাবে নিচের উপদেশগুলো মেনে চলতে পারেন -
ব্যথা ও জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল খাওয়া যায়। প্রস্রাবের ইনফেকশনের ব্যথা কমাতে অন্যান্য ওষুধের তুলনায় প্যারাসিটামল অধিক কার্যকর।
শিশুদের প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়ানো যেতে পারে। শিশুকে প্যারাসিটামল খাওয়ানো নিয়ম জানতে হবে
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে। এমন পরিমাণে পানি পান করা উচিত যেন নিয়মিত স্বচ্ছ ও হলুদ রঙের প্রস্রাব হয়।
পেটে, পিঠে ও দুই উরুর মাঝ গরম সেক নেওয়া যায়। এটি অস্বস্তি উপশমে সাহায্য করতে পারে।
আমাদের আর্টিকেলের বিষয়ে হচ্ছে ইউরিন ইনফেকশনের ডায়েট চার্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। এই অংশে আমরা ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধ
প্রস্রাবের ইনফেকশন সবসময় প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও কিছু নিয়ম মেনে চললে ইনফরমেশন হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে আনা যায়।
টয়লেটে টিস্যু ব্যবহারের সময়ে সামনে থেকে পেছনে পরিষ্কার করুন।
যৌনাঙ্গ শুকনো ও পরিষ্কার রাখুন।
প্রচুর পানি পান করুন। দৈনিক কমপক্ষে ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করা উচিত।
বাথটাব বা পুকুরে গোসল করার পরিবতে শাওয়ার কিংবা বালতির সাহায্য গোসল করুন।
সহবাসের আগে ও পরে যৌনাঙ্গ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
সহবাসের পরে তাড়াতাড়ি প্রস্রাব করুন।
সুতি কাপড়ের ঢিলেঢালা অন্তবাস ব্যবহার করুন।
এক থেকে তিন বছর বয়সী বাচ্চার ডায়পার বা ন্যাপি নিয়মিত পরিবর্তন করুন।
আমাদের আর্টিকেলের বিষয়ে হচ্ছে ইউরিন ইনফেকশনের ডায়েট চার্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। এই অংশে আমরা ইউরিন ইনফেকশনের চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ইউরিন ইনফেকশনের ডায়েট চার্ট
নিরামিষভোজীদের প্রস্রাবে ইনফরমেশনের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম। ২০২০ সালের একটি গবেষণা হয়েছিল যেখানে প্রায় ৯ বছর ধরে বৌদ্ধের অনুসরণ করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেলে, নিরামিষ খাবারের প্যাটার্ন প্রস্রাবে ইনফরমেশনের ঝুঁকি প্রায় ১৬ শতাংশ হ্রাসের সাথে যুক্ত ছিল।
লাল মাংস এবং অন্যান্য প্রাণীজ প্রোটিণে উচ্চ সম্ভবনাময় রেনাল অ্যাসিড লোড বা পিআরএএল'স থাকে। যার মানে হচ্ছে এরা প্রস্রাবকে অধিক অম্লীয় করে তোলে। ফল এবং শাকসবজিতে হাই পটেনশিয়াল রেনাল অ্যাসিড লোড কম থাকে, যার ফলে প্রস্রাব কম অম্লীয় হয়।
বেরি জাতীয় খাবার যেমন ক্রেনবেরি, ব্লবেরি, রাস্পবেরি।
প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার যেমন: টকদই, কিমচি, আচার
উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন : কলা, বাদাম, ডাল,বীজ, গোটা শস্য ইত্যাদি।
স্যালমন, মাছের তেলের সম্পূরক ইত্যাদি।
আমাদের আর্টিকেলের বিষয়ে হচ্ছে ইউরিন ইনফেকশনের ডায়েট চার্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। এই অংশে আমরা ইউরিন ইনফেকশন এড়িয়ে চলতে যেসব খাবার খেতে হবে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
প্রস্রাবের ইনফেকশনে যে খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
আরকটি উপায়ে নিরামিষভোজীদের প্রস্রাবে ইনফরমেশন হওয়া থেকে রক্ষা পান। তা হলো নিরামিষ জাতীয় খাবার প্রস্রাবকে কম অস্লীয় করে তোলে। গবেষণায় দেখা গেছে, যখন প্রস্রাবে কম অম্লীয় এবং বেশি নিরপেক্ষ হয়, তখন এটি মূত্র তন্ত্রের সংক্রমণ এর সাথে সম্পর্কিত ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে।
বেশি মশলাযুক্ত খাবার
টক জাতীয় ফল
কফি
সোডা
এলকোহল
আর্টিফিশিয়াল সুইটনার ইত্যাদি
আমাদের আর্টিকেলের বিষয়ে হচ্ছে ইউরিন ইনফেকশনের ডায়েট চার্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। এই অংশে আমরা ইউরিন ইনফেকশনের ওষুধের নাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
প্রস্রাবে ইনফেকশন ওষুধের নাম
অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের একটি গ্রুপ হলো ফ্লোরোকুইনোলন সাধারণত ইউটিআই এর জন্য দেওয়া হয়না। কিছু ক্ষেত্রে কিডনিতে সংক্রমণে ইউটিআই চিকিৎসায় যদি অন্য কোন বিকল্প না থাকে।
ট্রাইমেথোপ্রিম / সালফামেথোক্সাজোল
ফসফোমাইসিন
নাইট্রোফুরানটয়েন
সেফালেক্সিন
সেফট্রিয়াক্সোন
সাধারণত প্রস্রাবে ইনফেকশনের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো চিকিৎসা শুরুর কয়েক দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে আপনার যদি এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ চালিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি ব্যথার ওষুধ সেবন করতে হবে।
প্রসাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়ার ঘরোয়া চিকিৎসা
প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া অনুভব হলে অবশ্যই সবার প্রথমে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। তবে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা আছে যা প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া খানিকটা উপশম করবে৷
হাইড্রেটেড থাকুন : প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভব করা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই হাইড্রেটেড থাকতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
নারিকেল পানি : প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কমাতে যেসব ঘরোয়া চিকিৎসা আছে, তার মধ্যে নারিকেল পানি পান করা অন্যতম। নারিকেল পানিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রোলাইটস আছে।
মধুমিশ্রিত লেবুপানি : কুসুম গরম পানিতে ১ টা লেবুর রস ১ চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে পারেন।
আমলা জুস : আমলা রস মূত্র তন্ত্রের সংক্রমণের চিকিৎসায় আরেকটি জনপ্রিয় ঘরোয়া পদ্ধতি। প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কমাতে আমলা রস কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
টকদই : প্রতিদিন দুই থেকে তিন চামচ টকদই খাবারের তালিকায় রাখুন। প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া উপশম করতে টকদই উপকারী।
লেখকের মন্তব্য
আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় হলো ইউরিন ইনফেকশনের ডায়েট চার্ট, এর লক্ষণ, প্রতিকার, প্রতিরোধ এবং যেসব খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। আমাদের আজকের আলোচনা ছাড়া কোন প্রশ্ন কিংবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা আপনাদের সঠিক উত্তর দেওয়া চেষ্টা করব।
আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url