কবুতর পালন পদ্ধতি ও কবুতরের রোগের চিকিৎসা 2025
আপনি যদি কবুতর পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কম খরচে অল্প সময়ে বাচ্চা পাওয়া যায়, বাজারে দামও বেশি। তাই খুব সহজেই কবুতর পালন করে আয় করা সম্ভব। নিচে কবুতর পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
অনেকেই শখের বশে কবুতর পালন করেন। এছাড়া আমাদের দেশে এখন বাণিজ্যিকভাবেও কবুতর পালন করে কেউ কেউ। কবুতর পালনের জন্য বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না।
সূচিপত্র
কবুতর পালন পদ্ধতি ও চিকিৎসা
আমাদের দেশে গ্রামগঞ্জে বাড়ির উটানে এক কোণে এবং শহরে বাড়ির ছাদে গৃহপালিত পাখির মধ্যে কম বেশি সবাইকে কবুতর পালন করতে দেখা যায়। দিন দিন কবুতর পালনের জনপ্রিয়তা বেড়েই যাচ্ছে। সৌখিনভাবে কবুতর পালতে গিয়ে ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক আকার ধারণ করছে।
প্রাচীনকাল থেকেই কবুতর পালন করা হচ্ছে এটা সত্য কিন্তু রাজা - বাদশারা তাদের বার্তা অন্য জনের কাছে প্রেরণের জন্য কবুতর ব্যবহার করতেন এই কথাটার সত্যতা পুরোপুরি পাওয়া যায় নি কিন্তু পৃথিবী জুড়ে কবুতরকে শান্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে কবুতর কিনে এনে উন্মুক্ত করে অনুষ্ঠানের শুধ উদ্বোধন করা হয়।
কবুতরের রোগ ও চিকিৎসা
আমরা আমাদের বাড়িতে বিভিন্ন গৃহপালিত পশুপাখি পালন করে থাকি। আর প্রত্যেক গৃহপালিত পশুপাখির রোগবালাই হয়ে থাকে, এটা স্বাভাবিক। সে রোগবালাই কবুতরের মধ্যে দেখা দেয়। কবুতর পালন পদ্ধতি করতে হলে সে রোগবালাই সাথে আমাদের পরিচিত হতে হবে এবং জানতে হবে এ রোগবালাইয়ের চিকিৎসা কি। বিভিন্ন রোগে কবুতর আক্রমণ হতে পারে তবে এ রোগবালাই চিকিৎসা রয়েছে। সঠিক চিকিৎসা নিয়ে রোগ থেকে কবুতরকে মুক্তি দেওয়া যায়। চলুন তাহলে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক কবুতরের রোগ ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে -
রাণীক্ষেত রোগ ও চিকিৎসা : এ রোগটি কবুতরের ভাইরাসজনিত একটি রোগ। এ রোগে আক্রান্ত কবুতর নিশ্চুপ হয়ে থাকে, ঝিমাবে, জ্বর আসে, পায়খানা স্বাভাবিক থাকে না এবং খাবার ধীরে ধীরে কমে যাবে।
রানীক্ষেত রোগ প্রতিরোধ করতে কবুতরকে নিয়মিত ভিটামিন সি জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে। রানীক্ষেত রোগে আক্রান্ত কবুতরকে রেনামাইসিন এবং আরডিভি নামক ভ্যাকসিন দিতে হবে৷
ফাউল কলেরা রোগ ও চিকিৎসা : ব্যাকটেরিয়া জনিত কবুতরের একটি রোগের নাম ফাউল কলেরা। এ রোগে আক্রান্ত কবুতরের শ্বাসকষ্ট সমস্যা হয় ফলে কবুতর হা করে থাকে। এছাড়া হাঁচি, গলার শব্দ, মুখে ফেনা এবং কবুতরের ডানা কাঁপতে থাকার মতো লক্ষণ দেখা যায়।
এ রোগে আক্রান্ত কবুতরকে সালফার ড্রাগ দিতে হবে এবং প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে টিকা প্রদান করতে হবে। এছাড়া বাড়িতে প্যারাসিটামল ও রেনামাইসিন ওষুধ দুটি দিতে পারেন।
গুটি বসন্ত রোগ ও চিকিৎসা : এ রোগে আক্রান্ত কবুতরের চোখে, ঠোঁটের চারপাশে এবং পায়ে গুটি আকারের ক্ষত দেখতে পাওয়া যায়। সঠিক চিকিৎসা না নিলে কবুতর খাওয়া বন্ধ করে মারা যায়।
এ রোগের চিকিৎসায় আক্রান্ত কবুতরকে এন্টিবায়োটিক , এমাইনো এসিড, টপিক্যাল প্রাণী চিকিৎসাকের পরামর্শ নিয়ে আপনার কবুতরের বয়স অনুযায়ী খাওয়াবেন।
কৃমি রোগ ও চিকিৎসা : কবুতরের শরীরে কৃমির সংক্রমণ মারাত্মক একটি রোগ। এ রোগে আক্রান্ত কবুতরের মলের মধ্যে কৃমি দেখতে পাওয়া যায়। সঠিক চিকিৎসা না নিলে কবুতর মারা যায়।
এ রোগের আক্রমণ কবুতরকে আলাদা করে রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমির ওষুধ দিতে হবে। পরিস্কার খাবার ও পানি দিতে হবে।
কবুতর পালন বাসস্থান
কবুতর পালন পদ্ধতি খুবই সহজ। কবুতর পালনের পূর্বে কবুতরের স্থানটি নির্বাচন করুন। যাতে কুকুর বিড়াল বা অন্যান্য প্রাণী আক্রমণ করতে না পারে এবং কবুতর থাকার স্থানটিতে প্রচুর পরিমাণে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।এছাড়াও খেয়াল রাখতে হবে বৃষ্টির পানি, ঝড় ও বাতাস, শীতে ঠান্ডা বাতাস ঘরে যেন না প্রবেশ করে।
কবুতরের ঘর তৈরির জন্য পাতলা কাঠ, পাতলা টিন, বাঁশ অথবা খর দিয়ে খাঁচার তৈরি করা যায়। কবুতরের খোপ মূলত দুই বা তিন তলা বিশিষ্ট তাক করে খাঁচা তৈরি করতে হবে। খাঁচার ভিতর সাধারণ কবুতর পালার জন্য প্রতি খোপ ৩০ সে.মি * ৩০ সে.মি * ২০ সে.মি এবং বড় আকারে কবুতরের জন্য ৫০ সে.মি * ৫৫ সে.মি. * ৩০ সে.মি. তৈরি করতে হবে।
খাঁচার ভিতর শুকনো খোড় - কুটা রেখে দিলে ডিম পাড়ার সময় হলে ঠোঁট দিয়ে নিজেরাই খোপের ভিতরে নিয়ে যাবে।কবুতরকে মুক্ত ও আবদ্ধ ভাবে পালন করা যায়৷ কবুতরকে মুক্তভাবে পালন বলতে, সারাদিন এদিক - ওদিক ঘুড়ে বেড়াবে মাঠে ঘাটে গড়ে থাকা শস্য দানা খাবে এবং সন্ধায় ঘরে ঢুকবে।
এভাবে কবুতর পালন পদ্ধতি জন্য কবুতরের খাবার খরচ অনেক কম হয় আর আবদ্ধভাবে কবুতর পালন করলে ঘরের সামনে খাবার ও পানি পাত্র রাখতে হবে সময় মত খাবার পানি দিতে হবে। এতে করে মুক্তভাবে পালন করা কবুতরের চাইতে একটু বেশি খাবার খরচ হবে।
কবুতরের মাথা ঘোরা রোগের ওষুধ
কবুতর পালন পদ্ধতি সম্পর্কে আজকের পোস্টে। বমি ভাব বা বমি করবে। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে খাঁচার এককোণে চুপ করে লোম ফুলিয়ে বা এক পা উচু করে অথবা গায়ে মুখ গুজে বসে থাকবে। কবুতরের মাথা ঘোরা রোগে ঘাড় বেকে যাওয়া বা মুচড়ান বা ঘাড় উল্টে যাওয়া বা মাথা ঘুরান কাপতে থাকবে।
অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক পাখি কিছুটা শিথিল হয়ে যাবে ও দ্রুত ওজন কমে যাবে ও বুকের হাড্ডি বের হয়ে যাবে। উল্টে গড়ে যাবে বা খাবারের সঠিক জায়গায় ঠোকর দিতে পাবে না। বাকা ভাবে উড়া বা উগতে গিয়ে গড়ে যাবে, একই জায়গায় ঘুরতে থাকবে। গাড় সবুজ পায়খানা বা সবুজ ও সাদা পায়খানা বা পাতলা সবুজ পায়খানা করে।
কবুতরের মাথা ঘোরা রোগে ভিটামিনের অভাবজনিত কারণে হয়। এই রোগে কবুতরকে বিয়োটিভ দিনে ২ বেলা করে খাওয়াতে হবে। এছাড়া একটা বোতলে ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম ছোলা নিয়ে পানি দিয়ে রাখতে হবে। প্রতিদিন ওই ছোলা বড় কবুতরের ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৫০ টা এবং ছোট কবুতরের জন্য ২০ থেকে ৩০ টা করে খাওয়াতে হবে।
কবুতরের ঝিমানো রোগের ওষুধ
- ভিটামিন সি
- প্যারাসিটামল
- স্যালাইন
- রেনামাইসিন
- এজিথ্রোমাইসি
কবুতরের ডিপথেরিয়া রোগ
কবুতরের ডিপথেরিয়া রোগ একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। Corynebacterrium Diphtheriae নামক ব্যাকটেরিয়া এর রোগের মূল উৎস। এই রোগটি সকল বয়সী কবুতরের হয়ে থাকে তবে শিশু বা ছোট কবুতরগুলো বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে এই রোগে। ধুলো, পানি, বায়ুর মাধ্যমে এই রোগটি ছড়ায়।
কোন জাতের কবুতর বেশি বাচ্চা দেয়
বর্তমান সারাবিশ দেয়। কারণ কবুতরের বাচ্চার বানিজ্যিকভাবে চাহিদা বেশি, তাই যত বেশি বাচ্চা বিক্রি করা যাবে তত বেশি লাভবান হওয়া যায়।
বাংলাদেশে ২০ জাতের কবুতরের মধ্যে গিরিবাজ জাতের কবুতর বেশি বাচ্চা দেয়। এ জাতের কবুতর বছরে অনেকবার ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে। এ জাতের কবুতরগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয়ে থাকে। ফলে বাচ্চাদের রোগ কম হয়। এ জাতের কবুতরগুলো বাচ্চা ছোট থাকা কালিন সময়ে অবার ডিম দিতে সক্ষম হয়।
এ জাতের কবুতরগুলো খাওয়ার ব্যাপারে বেশ এগিয়ে। এ জাতের কবুতরগুলো বেশি উড়তে পারে এবং পুষ্টিকর খাবার খাই আবার বাচ্চাদের খাওয়াই। যার ফলে বাচ্চা তাড়াতাড়ি খাওয়ার উপযোগী হয়, তাড়াতাড়ি বাজারজাত করা যায় এবং তাড়াতাড়ি বড় হয়ে ডিম দিয়ে।
তবে তার আগে আপনাকে সুস্থ ও সটিক গিরিবাজ জাতের কবুতর ক্রয় করতে হবে। গিরিবাজ জাতের কবুতর আবার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। সেগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে, সঠিক জাতের কবুতর আপনাকে কিনতে হবে।
কবুতরের খাদ্য তালিকা
বাণিজ্যিক ভাবে কবুতর উৎপাদনের জন্য নিচে কিছু মিশ্র খাদ্য ব্যবহার করা ভালো ফল পাওয়া যায়। নিচে সেগুলোর তালিকা আকারে তুলে ধরা হলো
- ভুট্টা ৩৫%
- মটর ২০%
- গম ৩০ %
- ঝিনুকের গোড়া বাছনাপাথর ৭%
- অ্যামাইন অ্যাসিড ৭%
- লবণ ১%
আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url