৬ মাসের বাচ্চাদের সেরেলাক তৈরির নিয়ম-সেরেলাক খাওয়ার উপকারিতা
৬ মাসের বাচ্চাদের সেরেলাক তৈরির নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে আজকের এই আর্টিকেলে। এই সময়ে বাচ্চাদের পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন। তাই বাচ্চাদের জন্য খাবারের নিয়মগুলো ও তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ বাচ্চাদের খিচুরি খাওয়ার উপকারিতা আপনার জানা দরকার।
আপনার বাচ্চাকে ৬ মাস বয়সের বাচ্চার যত্ন, খাবার নিয়মসহ, ৬ মাসের বাচ্চাদের সেরেলাক তৈরির নিয়ম খাওয়ানোর জন্য আপনাকে নিয়ম জানতে হবে। এই সময়ে বাচ্চার শারীরিক মানসিক বিকাশ ঘটে তার জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন।
সূচিপত্র
৬ মাসের বাচ্চাদের সেরেলাক বানানোর নিয়ম
৬ মাসের বাচ্চাদের সেরেলাক তৈরির নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আজকের পোস্টে। সেরেলাক তৈরির উপকরণগুলো আলাদা আলাদা বাটিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে।
- তারপর আলাদাভাবে একটি নরম তুলোর কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে একটি শুষ্ক জায়গায় একসাথে রাখুন।
- একদিনের জন্য সূর্যের আলোর প্রত্যেকটি উপকরণ শুকিয়ে নিন।
- পরিষ্কার বাদামি চাল, কুলঠি কলার, মসুর ডাল, বাদাম, এলাচ আলাদাভাবে খোলায় ভেজে নিন এবং শুকনো পাত্রে রাখুন। নিশ্চিত করুন যে প্রতিটি উপাদান মাঝারি তাপে ভাজতে হবে। বাইরে থেকে নয় একবারে ভাজা গারো রং হয়ে গেলে সেগুলো ঠান্ডা করুন।
- ঠান্ডা হয়ে গেলে একটি ব্লেন্ডারে দিয়ে মিশ্রণগুলো ভালো করে পাউডার করে রাখুন।
- তারপর ঠান্ডা করে রেখে দিন।
- বাসায় তৈরি পুষ্টিকর ঘরোয়া সেরেলাক এয়ার টাইট কন্টেনিয়ারে সংরক্ষণ করে ৪ থেকে ৬ মাস ব্যবহার করতে পারবেন।
- সেরেলক বাচ্চাকে খাওয়ানোর নিয়ম
- এক কাপ দুধ ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে।
- তারপর এতে দুই চামচ সেরেলাক মেশান এবং নারতে থাকুন যাতে জমাট না বেধে যায়। এভাবে ঘন পেস্ট তৈরি করুন প্রয়োজন হলে আরো দুধ মেশাতে পারেন।
- হয়ে গেলে জ্বাল বন্ধ করে দিন। গরম থাকতে থাকতে আপনার বাচ্চাকে খাওয়ান।
- খাবারটির সাথে আপনার পছন্দমত ফল, পাকা কলা, আপেল, সাফেদা মিশাতে পারেন।
- মিষ্টি করতে চাইলে চিনি অথবা গুর মেশাতে পারেন।
- ৫ থেকে ৬ মাসের বাচ্চাদের বাদাম না খাওয়ানো ভালো।
সেরেলাক এর উপাদান
বাচ্চাকে ৬ মাস বয়সের পরে বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুদেরকে দেয়া হয় সেরেলাক, খিচুড়ি কিংবা সুজি। বর্তমান বাজারে বিভিন্ন ধরনের দেশি - বিদেশি বিভিন্ন স্বাদের সেরেলাক পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেগুলো বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু উপকার বা ক্ষতিকর তা আমরা জানি না। তাই বাচ্চার সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ৬ মাসের বাচ্চাদের সেরেলাক ঘরে তৈরি করে সেরেলাক খাওয়ালে খুব ভালো হয়। নিচে সেরেলাক তৈরি করার নিয়ম দেওয়া হলো-
- পোলাও বা বাদামী চাল এক কাপ
- রাগী - এক কাপ
- কুলঠি ডাল - এক কাপ
- মসুর ডাল - এক কাপ
- সাবুদানা - ১ কাপ
- ভুট্টাদানা - ১ কাপ
- আমন্ড বাদাম - ১ থেকে ২ কাপ
সেরেলাক দিনে কতবার খাওয়া যায়
আপনি যদি ৬ মাসের বাচ্চাকে এক বছরের বাচ্চার সেরেলাক খাওয়ন সেটা ঠিক মত হজম করতে পারবে না। ফলে শিশুর ডায়রিয়া পেট ব্যথা হবে। সেরেলাক প্যাকেটর খোলার তিন সপ্তাহের মধ্যে শিশুকে খাওয়াতে পারবেন। কারণ এই সেরেলাকগুলোর মধ্যে যে ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এজন্য মেয়াদ একেবার দীর্ঘস্থায়ী নয় এবং বেশিদিন ধরে থাকে না।
সেরেলাক বানানোর ২০ থেকে ৩০ মিনিট এর মধ্যে খাওয়াতে হবে এর বেশি সময় হয়ে গেলে বাচ্চাকে সেগুলো খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। যেটুকু খায় না তা মা খেয়ে ফেলবে না হলে বাইরে ফেলে দিবে। সেরেলাকের মধ্যে মিষ্টি দুধ মেশানো থাকে খাবারটা অনেক বেশি টেস্টি হয়ে থাকে। বাচ্চারা খুবই পছন্দ করে।
সেরেলাক এর উপকারিতা
৬ মাসের বাচ্চাদের সেরেলাক খাওয়ানোর উপকারীতা ও শিশুদের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। এটি খুবই স্বাস্থ্যকর খাবার যা শিশুদের জন্য অনেক সুবিধা প্রদান করে। এই সেরেলাকের বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে, পুষ্টির মান, হজমের সহজতা, স্বাদের ভিন্নতা এবং পুষ্টির সম্পূরক খাদ্য হিসাবে অনেক পরিচিত একটি খাদ্য। নিচে সেরেলাক এর উপকারিতা শেয়ার করা হলো -
- আয়রন শিশুদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি লাল রক্তকণিকা তৈরি করতে এবং সারা শরীরে অক্সিজেন বহন করতে সাহায্য করে। সেরেলাক আয়রনের একটি ভালো উৎস এবং এটি শিশুদের রক্তা তৈরি করতে সাহায্য করে।
- শক্তিশালী হাড় ও দাঁতের বিকাশের জন্য ক্যালসিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেরেলাক ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস। এটি নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে যে আপনার শিশুর সুস্থ বৃদ্ধির জন্য ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে।
- সেরেলাকে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি এবং জিংক সহ বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে যা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- সেরেলাক খাদ্যশস্য থেকে তৈরি করা হয় যা রান্না করা হয়। যা শিশুদের হজম করা সহজ করে তোলে। কোষ্ঠকাঠিন্য বা অন্যান্য হজমের সমস্যা ভুগছে এমন শিশুদের জন্য এটি সাহায্য করতে পারে।
- সেরেলাক সহজেই প্রস্তুত এবং পরিবেশন করা যেতে পারে, এটি ব্যস্ত পিতামাতার জন্য সুবিধাজনক বিকল্প।
আশাকরি আপনি সেরেলাক এর উপকারিতা বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। সেরেলাক আপনার বাচ্চাদের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর একটি খাদ্য।
সেরেলাক এর অপকারিতা
সেরেলাক শিশুদের খাদ্যের একটি জনপ্রিয় পুষ্টিকর খাদ্য এবং ছোট শিশুদের জন্য এটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য। সেরেলাকের সম্ভাব্য পাশ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর কিছু বিষয় এবং আপনার সন্তানের সুস্বাস্থ্যের নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয়তা সতর্কতা নিয়ে আলোচনা করব।
- সেরেলাকে দুধ এবং গম রয়েছে, যা সাধারণত অ্যালার্জেন। যদি আপনার শিশুর দুধ বা গমের অ্যালাজি থাকে তবে সেরেলাক খাওয়ার পর সে আমবাত, ফুসকুড়ি বা শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে।
- সেরেলাক কিছু শিশুর জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যদি আপনার শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। তাহলে আপনি পানির পরিবর্তন মায়ের দুধের সাথে সেরেলাক মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।
- সেরেলাক কিছু শিশুর জন্য ডায়রিয়া জনিত রোগের সৃষ্টি করতে পারে। যদি আপনার শিশুর ডায়রিয়া হয়, তাহলে আপনাকে আপনার শিশুর সেরেলাক খাওয়ানো বন্ধ করা উচিত।
- সেরেলাক চিনির পরিমাণ বেশি থাকে, যা আপনার বাচ্চাদের দাঁতের ক্ষয় করতে পারে। আপনার শিশু যদি প্রচুর পরিমাণে সেরেলাক খায়, তবে খাবারে পর আপনার বাচ্চাদের দাঁত ব্রাশ করতে ভুলবেন না।
আশাকরি আপনারা সেরেলাক এর অপকারিতা বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এছাড়া আরো অনেক সমস্যা হতে পারে। আপনারা অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার এর সাথে পরামর্শ করুন ।
৬ মাসের শিশুর যত্ন
৬ মাসের বাচ্চাদের সেরেলাক তৈরির নিয়ম জানার পাশাপাশি ছয় মাসের শিশুর যত্ন নতুন ভাবে নিতে হবে সবাই বাচ্চার খাবারের তালিকায় বাড়তি খাবার খাওয়াতে হবে। বাচ্চাদের প্রতি এবং বাচ্চার খাওয়া - দাওয়া প্রতি যত্ন নিতে হবে। বাচ্চার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চার খাবার বাড়তে হবে। কি খেলে বাচ্চরা পুষ্টির ঘাটতি কমবে সেইসব খাবার তালিকা রাখতে হবে৷
বাচ্চাদের খিচুড়ি খাওয়ার উপকারিতা অনেক। ছয় মাস বয়সের পর থেকে বাচ্চাকে নতুন আইটেম খাওয়াতে হবে। যেমন - ৬ মাসের বাচ্চার সেরেলাক তৈরির নিয়ম জেনে তৈরি করে বাচ্চাকে বুকের দুধের পাশাপাশি খাওয়াবেন আরও অন্যান্য খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, ফলের রস, বিভিন্ন শাক সবজি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াতে হবে। এই সময় বাচ্চার খাবারের পাশাপাশি তাদের আচার ব্যবহারের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
বাচ্চাকে কখনোই জোর করে খাওয়াতে যাবেন না। জোর করে খাওয়ালে বাচ্চার খাবারের প্রতি ভয় তৈরি হবে। তারপর থেকে আবার খাবার দেখলেই কান্নাকাটি শুরু করবে। তাই বাচ্চা যখন খেতে চায় এটাকে খাওয়ানোর পাশাপাশি তাকে একটি প্লেটে কিছু খাবার দিয়ে ছেড়ে দিতে হবে।
৬ মাসের শিশুর খাবার তালিকা
৬ মাস বয়সে সাথে বাচ্চার খাবার তালিকা তৈরি করতে হবে। প্রতিমাসে বাচ্চাদের খাবার তালিকা রাখতে হবে। এ সময়ে বাচ্চাদের গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় এ সময় বাচ্চাদের শরীরিকভাবে ও মানসিকভাবে বিকাশ ঘটে। তাই আপনার বাচ্চাকে অবশ্যই এই সময় খাবারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। ছয় মাসে পা দেওয়া মাত্র বাচ্চার জন্য খাবার তালিকা তৈরি করতে হবে।
৬ মাসের বাচ্চাদের সেরেলাক তৈরির নিয়ম জেনে তৈরি করে কাবার রাখতে পারেন। ৬ মাসের শিশু কাবার তালিকায় থাকতে হবে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এই খাবারগুলোতে প্রচুর প্রোটিন রয়েছে। বিভিন্ন ফলের রস যেমন কলা, আপেল, কমলা, আঙ্গুর, সবজি, মিষ্টি কুমড়া, ডাল, মিষ্টি আলু ইত্যাদি খাবার তালিকায় রাখতে হবে।
বাচ্চাদের খাওয়ানোর সিস্টেম রাখতে হবে বাচ্চারা অনেক বেশি খেতে পারে না তাই সবগুলো পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করতে আপনি চাইলে আপনার বাচ্চাকে ৬ মাসের খিচুড়ি রেসিপি তৈরি করে দিতে পারেন। বাচ্চাদের খিচুরি খাওয়ার উপকারিতা অনেক এতে করে বাচ্চা সব ধরনের পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকে।
৬ মাসের বাচ্চার খাবার নিয়ম
- ছয় মাসে অল্প অল্প করে খাবার দিতে হবে।
- ধীরে ধীরে খাবারের পরিমাণটা বাড়াতে হবে।
- কোন খাবারে এলার্জি আছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে।
- বাচ্চাকে খাবার জন্য জোর করবেন না বাচ্চা তার চাহিদা মতো যতোটুকু খায় ততটুকু খাওয়াবেন।
- বাচ্চাদের ঘনঘন খাবার সামনে দিতে হবে এবং তাদের হাত তুলে হাত দিয়ে তুলে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
- শিশুকে সাধু ও টেস্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে, স্বাদনমতো খেতে পারবে। খাওয়ার চাহিদা বাড়বে।
- বাড়তে দুধ খাওয়াতে চাইলে তাহলে পানিতে বেশি করে দিয়ে পাতলা করে খাওয়াতে হবে।
আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url