গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা ২০টি
গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনার যদি না জানা থাকে তাহলে আজকের এই আর্টিকেলেটি থেকে জেনে নিন। গর্ভাবস্থায় আমড়া খেলে কি কি উপকার ও ক্ষতি হয় সেই বিষয় সম্পর্কে জানতে হলে সম্পন্ন আর্টিকেলটি পড়ুন।
ভূমিকা
আমড়া একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। আমড়া খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় আমড়া খেলে গর্ভবতী মা ও শিশু উভয় সুস্থ থাকে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা গর্ভবতী মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এতে যে পুষ্টিগুণ রয়েছে সেটা শরীরে বিভিন্ন পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। অনেকেই আমড়া খেয়ে থাকে কিন্তু গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা এবং আমড়া খাওয়ার উপকারিতা এবং অউপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। তাই আজকে আমড়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব এই আর্টিকেলে।
গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা
আমড়া, ভিটামিন সি এবং নানা খনিজ উপাদানের ভরপুর একটি ফল। আমড়া খুবই সুস্বাদু টক মিষ্টি ফল যা এখন কমবেশি সারা বছর জুড়ে পাওয়া যায়। আমড়া গর্ভবতী এবং গর্ভস্থ শিশুর নানা উপকার করে থাকে। তাই আজকে আমি এই আর্টিকেলের অংশটুকুতে গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই আপনারা যারা এই বিষয়টি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না। তারা এই আর্টিকেলের অংশটুকু থেকে জেনে নিতে পারেন।
শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : পৃথিবীতে সুস্থ ও রোগ প্রতিরোধক্ষম বাচ্চা আগমনের জন্য মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। ভিটামিন সি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মুখের রুচি বৃদ্ধি করতে আমড়া খেতে পারেন। তাছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ার ২৬.৪৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে। যেখানে দৈনিক সর্বনিম্ন ৮৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : ভূমিষ্ট হওয়ার পর শিশুরা অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগে থাকে। মা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য আশ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেন আর বুকের দুধ পান করান তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে সহজে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। আমড়া প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আশ রয়েছে যা আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। ১০০ গ্রাম আমড়ায় ৩.৫ গ্রাম খাদ্য আশ রয়েছে।
গর্ভবতী মায়ের রক্ত শূন্যতা দূর করে : একজন গর্ভস্থ শিশুর চরম দুর্ভোগ তখন, যখন গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা ভুগেন। আমাদের দেশের প্রায় ৯০ ভাগ গর্ভবতী মায়েরা গর্ভকালীন সময়ে রক্তশূন্যতায় ভুগে থাকেন। শরীরের রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে গেলে রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়। ভিটামিন সি রক্তের হিমোগ্লোবিনের ভারসাম্য ঠিক রাখে। ভিটামিন সি শিশুর সুস্থ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
শিশুর ত্বক মসৃণ করে : যদিও বাচ্চা কালো বা ফর্সা আর কোমল ও মসৃণ আলাদা বিষয়। বাচ্চা কালো বা ফর্সা হওয়ার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সুস্থ সবল কমল ত্বক। গর্ভাবস্থায় আমড়া গ্রহণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ঠিক তেমনি বাচ্চা সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিশুর হাড় মজবুত করে : গর্ভাবস্থায় আপনার শিশু তার প্রয়োজনীয় সকল উপাদান আপনার কাছ থেকে গ্রহণ করবে। তাই সব ধরনের উপাদান আপনার কাছে মজুত থাকা চাই। আমাদের দেহে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়ামের অভাব হলে অস্টিওপরোসিস সহ হাড়ের নানা রোগ দেখা দেয়। আমড়াতে এই খনিজ উপাদানসমূহ পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। এজন্য আমড়া গর্ভাবস্থায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর হার্টের উন্নয়ন : শিশুর সার্বিক উন্নয়ন আপনার গর্ভাবস্থা থেকেই হয়। আমড়া কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস করে হৃদরোগের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করে। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর যতদিন বাচ্চা বুকের দুধ পান করবে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আপনার খাদ্য তালিকার উপরে নির্ভর করবে।তাই নিজের এবং শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য আমড়া খেতে পারেন।
আমড়া খাওয়ার অপকারিতা
সবকিছুর যেমন ভালো খারাপ দিক রয়েছে ঠিক তেমনি আমড়া খাওয়ার অপকারিতা রয়েছে। উপরে আমড়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি এখন আমরা জেনে নিবো আমড়া খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে। আমড়া খেলে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। কারণ আমড়ার কোন পাশ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে আপনি যদি বেশি পরিমাণ খাব তাহলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই অতিরিক্ত না খেয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ খেতে হবে। এছাড়া আমড়া হচ্ছে একটি টক জাতীয় খাবার তাই খালি পেটে আমড়া খেলে পেট ব্যথা, বদহজম ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। তাই আমড়া খেলে পরিমাণ মতো খেতে হবে অতিরিক্ত নয়৷
আমড়া খাওয়ার নিয়ম
অনেকে আমড়া খেতে পছন্দ করেন। আমড়া বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। তবে আমড়া খেতে পছন্দ করেন কিন্তু সঠিক নিয়মে আমড়া খেতে না পারেন তাহলে উপকার পাবেন না। একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ দৈনিক কতটি আমড়া খাওয়া প্রয়োজন চলুন তা জেনে নেই।
আপনি যদি ছোট সাইজের আমড়া নির্বাচন করেন সেক্ষেত্রে ৩ টি আমড়া খেতে পারেন। মাঝারি সাইজের আমড়া নির্বাচন করলে ২ টি এবং বড় সাইজের আমড়া হলে ১ টি। আমড়া খাওয়ার সময় চাইলে কিন্তু আপনি খোসাসহ খেতে পারেন।
আমড়া ভালোভাবে ধুয়ে এটিকে কেটে টুকরো করে এটিকে আপনি শুধু চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এরমধ্যে কোন পরিমাণ লবণ, ঝাল বা তেল মিশিয়ে পুষ্টি নষ্ট করবেন না।
আমড়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারীতা
আমড়া টক মিষ্টি স্বাদের জন্য জনপ্রিয় একটি ফল এবং এটি পুষ্টিগুনে ও অন্যান্য ফলের থেকে এগিয়ে। আমড়া কেবল মুখরোচক খাবারই নয় বরং এটি স্বাস্থ্যের জন্য অতুলনীয় একটি ফল। আমড়া খাওয়ার যেমন নানা উপকারিতা রয়েছে, অপর দিকে এটি খাওয়ার অপকারিতা ও রয়েছে। চলুন তাহলে আমড়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারীতা সম্পর্কে বিস্তারিত -
- ম আমড়াতে প্রায় ৪০ শতাংশ ভিটামিন সি থাকে। যা আমাদের দৈহিক ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণে যথেষ্ট। আর এই ভিটামিন সি এর কারণে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ ও আমড়া খাওয়া যেতে পারে। কারণ প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়াতে প্রায় ৫০ মিলিগ্রাম বা তার বেশি পরিমাণ ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
- শরীরে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিতে আমড়া খাওয়া যেতে পারে। আমাদের শরীরে যে পরিমাণ আয়রনের প্রয়োজন তার প্রায় ৩০% পূরণ করতে আমড়া ভূমিকা রাখে।
- উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- দেহের ওজন স্বাভাবিক থাকে।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে পারে।
- চুলের গোড়া শক্ত এবং লম্বা করে।
দেশি ফল আমড়ার ৭ টি অসাধারণ গুণ
খাবার খাওয়া পর আমড়া খাওয়া যাবে না। অন্তত পক্ষে আধাঘন্টা থেকে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করে তারপর খাবেন। রাতের বেলা আমড়া খাবেন না। আমড়া খাওয়ার সাথে সাথে পানি না খেয়ে আধা ঘন্টা অপেক্ষা করে ১ গ্লাস কুসুম গরম পানি খেলে পেটের রোগগুলোর ক্ষেত্রে ভালো উপকারিতা পাবেন।
গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়ার সঠিক নিয়ম
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফল খাওয়া উচিত না। কারণ এতে শর্করার সঙ্গে কার্বোহাইড্রেট আর ব্যাকটেরিয়া মিশে যায়। ফলে শরীরের হজমশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। চিকিৎসারা বলেছেন, ফলের সঙ্গে যদি উচ্চমানের প্রোটিন খাওয়া হয় তবে শরীর থাকা শর্করা আরও সক্রিয় হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে। ফলে এটি হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। মূল খাবার খাওয়া মধ্যে কমপক্ষে আধা ঘন্টা ব্যবধান রাখতে হবে।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য সঠিক ফল খাওয়া নিশ্চিত করা জরুরি। কেননা গর্ভবতী থাকাকালীন দেহ অতিরিক্ত হরমোন উৎপাদন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় পর্যন্ত পরিবর্তনের সমুদ্র অতিক্রম করে। মাও শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়ম মেনে চলা জরুরি। বিভিন্ন প্রবন্ধ অনুযায়ী কিছু ফল গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্রস্তাবিত নয়। যেমন: আনারস, আঙুর, তেঁতুল, পেঁপে, কলা ইত্যাদি।
গর্ভাবস্থায় তেঁতুল খেলে কি হয়
বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশি তেঁতুল খাওয়া গর্ভধারণের পর শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষত, প্রথম ট্রাইমেস্টার অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়া উচিত নয়। তেঁতুল মায়ের শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের উৎপাদন অনেকটা কমিয়ে দেয়। এর কারণ তেঁতুলে অত্যাধিক মাত্রায় থাকা ভিটামিন সি রয়েছে।
- গর্ভাবস্থায় পরিমিত পরিমাণে তেঁতুল খেতে পারেন। অত্যাধক সবকিছুই খারাপ। এটি বেশি খেলে আপনার গ্যাসের সমস্যা, বদহজম হতে পারে।
- প্রতিদিন না খাওয়াই ভালো তবে ১০ গ্রাম এর বেশি খাবেন না।
- সকালে খালিপেটে একেবারেই তেঁতুল খাবেন না।
- যদি খেতেই হয় তাহলে খাবার গ্রহণ এর আধা ঘন্টা অল্প পরিমাণ খেতে পারেন।
আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url