পাঙ্গাস মাছের খাবার তালিকা ও পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি ২০২৫

বর্তমান সময়ে অনেক ব্যবসায়ী আছে যারা পুকুরে পাঙ্গাস মাছের খাবার  চাষ করেই সফল হয়েছে। বাজারে পাঙ্গাস মাছের চাহিদা রয়েছে অনেক তাই পাঙ্গাস মাছের খাবার এবং  চাষ করে চাষিরা লাভবান হয়। 
photo

বর্তমান সময়ে পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে নদীর নাব্যতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। আবার প্রাকৃতিক সাথে প্রজনন ক্ষেত্রে ক্ষতিহ্রস্থ হবার জন্য পাঙ্গাশ উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে। তবে পুকুরে পাঙ্গাস মাছের খাবার তালিকা এবং চাষের ব্যাপক সম্ভবনা থাকায় আশির দশক থেকেই এর কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে। 
সূচিপত্র 

পাঙ্গাস মাছের খাবার তালিকা 

পাঙ্গাস একটি দ্রুত বর্ধনশীল মাছ। তাই পাঙ্গাস চাষের পুকুরে নির্দিষ্ট সময় পরপর খাদ্য প্রদান করতে হবে। বাজার থেকে কেনা সুষম খাদ্য পুকুরে ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু এতে উৎপাদন খরচ বেশি হয়। তাই বাজারজাত খাদ্য কিনা এটি খামারে বানানো যেতে পারে। 

প্রতিদিন পুকুরে মোট মাছের ওজনের শতকরা ৪-৬ ভাগ হিসাবে খাবার দিতে হবে। প্রতিদিনের খাবার ২ ভাগে ভাগ করে সকাল ও বিকালে দিতে হবে। তবে পোনা মাছকে একটু বেশি ও বড় মাছকে কম খাবার দিতে হয়। 

১০০ কেজি খাদ্য তৈরির জন্য পাঙ্গাশ মাছের খাবার তালিকা নিচে দেওয়া হলো- 

খাদ্য উপকরণপরিমাণশুটকি মাছের গুড়ো২৫ কেজিখৈল৩০ কেজিগমের ভুসি২০ কেজিচালের কুড়া২০ কেজিআটা৩.৫ কেজিলবণ২কেজিভিটামিন৭৫০ গ্রামখনিজ মিশ্রণ৭৫০ গ্রমমোট১০০ কেজি।

পাঙ্গাস মাছ চাষে আয় 

আমাদের দেশে বহু মাছ ব্যবসায়ী আছে যারা প্রথমবারের মতো পাঙ্গাস মাছ চাষ করে অনেক লাভবান হচ্ছে। আপনি যদি পাঙ্গাস মাছ চাষ করে অনেক ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করতে চান তাহলে প্রথমে আপনাকে পাঙ্গাশ মাছ কিভাবে চাষ করতে হবে অর্থাৎ পাঙ্গাশ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। 

বর্তমান সময়ে অনেক ব্যবসায়ী পাঙ্গাস মাছ চাষ করে কোটিপতি হচ্ছে। কেননা এখনকার বাজারে পাঙ্গাস মাছের অনেক চাহিদা। এর জন্য দিন দিন পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষের চাহিদা বারছে। পাঙ্গাস মাছ দেশে ও বিদেশে বিক্রি করে অনেক টাকা ইনকাম করা সম্ভব। প্রতিবছর এমন ও ব্যবসায়ী আছে যারা শুধু পাঙ্গাস মাছ বিক্রি করে ইনকাম করেন ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার বেশি। 

পাঙ্গাস মাছের খাবার তালিকা  করা অনেক সহজ। কেননা অল্প পরিমান জমিতে অনেক মাছ চাষ করা যায়। আর এখান থেকে ভালো পরিমাণে অর্থ উপার্জন করতে হলে সঠিকভাবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে পাঙ্গাস মাছ চাষ করতে হবে। তাহলে আপনি শুধু পাঙ্গাস মাছ বিক্রি করে মাসে অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। 

আমাদের দেশে পাঙ্গাস মাছের খাবার তালিকা ও চাষের পদ্ধতি নির্ভর করে পুকুর বা জলাশয়ের বৈশিষ্ট্য এর উপর। যেমন - পরিবেশগত অবস্থা, পানি নিয়ন্ত্রণ, সঞ্চয়, মানসম্মত পোনা প্রাপ্তি, বাজার ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। এই সব বিষয়গুলোকে মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় চাষ পদ্ধতিটি কেমন হবে। আজকে আমরা পাঙ্গাশ মাছের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

পুকুর নির্বাচন করা : পাঙ্গাস মাছ চাষে পুকুর নির্বাচন করতে হলে, পুকুরের দৈর্ঘ্য বেশি এবং প্রস্থ কম হতে হবে। পুকুরের তলা যেন সমতল হয় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। আর পুকুরের পানির গভীরতা ১.৫ থেকে ২ মিটার পর্যন্ত রাখা দরকার। পাঙ্গাশ চাষের জন্য দোআঁশ মাটির পুকুর সবচেয়ে ভালো। জরুরি প্রয়োজনে যাতে দ্রুত পানি দেয়া যায় সেজন্য পুকুরের কাছেই গভীর বা অগভীর নলকূপের ব্যবস্থা রাখা দরকার। 

পুকুর যেন বর্ষায় বা অতিরিক্ত বৃষ্টিতে যাতে করে ভেঙে বা ভেসে না যায় সেজন্য আগে থেকই লক্ষ্য রাখতে হবে ও প্রয়োজনীয় মেরামত সেরে ফেলতে হবে।সর্বোপরি এমন জায়গায় পুকুরটি বেছে নিতে হবে যেখানে যোগাযোগের সুবিধা ভালো এবং পর্যপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া আর একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে পুকুরের উপরে গাছপালার ছাড়া না পরে। 

পুকুর প্রস্তুত করতে হবে : পুকুরে পাঙ্গাশ মাছ চাষ করতে হলে পুকুর কোথায় হবে আগে স্থানটি নির্বাচন করতে হবে। তারপর ভালোভাবে পুকুর তৈরি করতে হবে যেন পুকুরের আয়তকার হয়। আর পুকুরের তলদেশে যদি কাদা থাকে তাহলে অবশ্যই চুনকাদার সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। তাছাড়া পুকুরে যদি আগে কখনো অধিক ঘনত্বের মাছ চাষ করা হয়ে থাকে তাহলে চুনের পাশাপাশি বেশি কিছু সার প্রয়োগ করতে হবে।

মাছের রোগজীবাণু : পাঙ্গাস মাছ চাষ করার বড় ধরনের বাধা বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু। সাধারণত অনেক ধরনের রোগ রয়েছে যেগুলো পাঙ্গাস মাছের হতে পারে। পাঙ্গাস মাছ লালচে দাগ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত এই রোগ হলে ত্বক ও পায়খানা গোড়ায় লালচে দাগ স্পষ্ট দেখা যায় এবং অনেক সময় মুখে ঘা হতে পারে। এছাড়া আরো বেশি কিছু রোগ রয়েছে যেগুলো পাঙ্গাস মাছকে আক্রমণ করে। 

খাদ্য প্রয়োগ করা : পাঙ্গাস মাছ চাষে পুকুরে যে খাবার তৈরি হয় তাতে মাছের ফলন ভাল হবে না। তাই ভাল মানের খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে চাষ পর্যায়ে দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ না করতে পারলে পাঙ্গাসের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। মাছের খাদ্যের পরিমান মাছের বয়স এবং দেহের ওজনের ওটর নির্ভর করে। ২০ দিন পর পর নমুনা হিসেবে কয়েকটি মাছের ওজন পরীক্ষা করে দেখতে হবে মাছ ঠিক মতো বাড়ছে কি না। 

বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে মাছ মজুদের ৬-৭ মাস পর যখন পাঙ্গাশের গড় ওজন ৯০০-১২০০ গ্রাম হয়, তখনই মজুদকৃ মাছের ৫০% বাজারে বিক্রি করে দিতে হয়। এতে করে অবশিষ্ট মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়। 

পাঙ্গাস মাছের রেনু পদ্ধতি 

পাঙ্গাস মাছের খাবার তালিকা ও পাঙ্গাশ মাছ চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের এই পোস্ট।  পাঙ্গাস মাছ চাষ করতে হলে প্রথমে পাঙ্গাস মাছের পোনা নির্বাচন করতে হবে। আর যদি চান পাঙ্গাস মাছ মিশ্র পদ্ধতিতে চাষ করবেন তাহলে পাঙ্গাস মাছের সাথে অন্যান্য মাছের পোলাগুলা সংগ্রহ করতে হবে। মাছ চাষের সফলতা অনেকাংশ নির্ভর করে ভালো মানের উপযুক্ত আকারের পোনার উপর। 

শতক প্রতি পাঙ্গাস মাছ ছাড়ার নিয়ম

শতক প্রতি সঠিক সংখ্যক মাছ ছাড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করে। 

একক প্রজাতি চাষ

  • রুই ২০ -২৫ টি 
  • কাতলা ১৫-২০ টি
  • মৃগেল ২০-২৫ টি
  • সিলভার কার্প ১০-১৫ টি
  • গ্রাম কার্প ১০-১৫ টি
  • তেলাপিয়া ৮০-১০০ টি
  • পাঙ্গাস ৪০-৫০ টি
বিভিন্ন কারণে হার পরিবর্তন 
পানির গুণাগুণ ভা সংখ্যা বাড়ানো যায়। খাদ্য প্রাপ্রতা বেশি হলে সংখ্যা বাড়ানো যায়। পালন সময় কম হলে বেশি সংখ্যক মাছ চাষ করা যায়। বড় পোনা হলে সংখ্যায় কম ছাড়তে হবে।

খাদ্য উপকরণ পরিমাণ
শুটকি মাছের গুড়ো ২৫ কেজি
খৈল ৩০ কেজি
গমের ভুসি ২০ কেজি
চালের কুড়া ২০ কেজি
আটা ৩.৫ কেজি
লবণ ২কেজি
ভিটামিন ৭৫০ গ্রাম
খনিজ মিশ্রণ ৭৫০ গ্রম
মোট ১০০ কেজ
পুকুরে পোনা ছাড়ার ৪ থেকে ৫ মাস পর গড়ে ৫০০ গ্রাম ওজন হয়। তখন কিছু কিছু মাছ পুকুর থেকে উঠিয়ে বিক্রি করলে পুকুরে মাছের ঘনত্ব কমে যাবে। এতে পুকুরের অন্য মাছগুলো তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠবে। 

পাঙ্গাস মাছের জাত

পাঙ্গাস মাছের জাতিগুলোর মধ্যে দেশি পাঙ্গাশ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। চলুন এদের পরিচয় সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক 

দেশি পাঙ্গাশ : দেশী পাঙ্গাস রুপালি রংয়ের পিঠের দিকে লালচে এবং পার্শ্ব রেখার ওপর সামান্য ধূসর। এ মাছের দেহে কোন আশ নেই। এখানো আমাদের দেশীয় প্রজাতের পাঙ্গাস সুস্বাদু এবং বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে। 

থাই পাঙ্গাস: এদের আদিবান থাইল্যান্ডে, কম্পুচিয়া, ভিয়েতনাম এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দেশে। আমাদের দেশে ১৯৯৩ সালে বিদেশি এ প্রজাতির মাছের সফল প্রজনন করানো সম্ভব হয়েছে। 

বর্তমানে বাণিজ্যিক চাষাবাদ এর ক্ষেত্রে থাই পাঙ্গাস একটি জনপ্রিয় নাম। দেশি পাঙ্গাশের চেয়ে এ মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। 

পাঙ্গাস মাছ চাষের সুবিধা 

পাঙ্গাস মাছের খাবার তালিকা নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলটি। এই অংশে আমরা পঙ্গাস মাছ চাষের সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। পাঙ্গাস চাষের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক পাঙ্গাস চাষের সুবিধা সম্পর্কে -
  • মাথায় পাঙ্গাস আমাদের দেশীয় কার্প জাতীয় মাছের সাথে মিশ্র চাষ করা যায়। 
  • দ্রুত বর্ধনশীল ও অধিক ঘনত্বে চাষযোগ্য এবং বেঁচে থাকার হারও বেশি। 
  • এ মাছটি সর্বভূক বলে যে কোন সম্পূরক খাদ্য দিয়ে চাষ করা যায়। 
  • মৃদু লবনাক্ততা সহ্য করতে পারে বলে উপকূলীয় এলাকার চাষ করা যায়। 
  • সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। 
  • ব্যাপক বাজার চাহিদা রয়েছে। 
  • প্রতিকূল পরিবেশে এ মাছ খুব সহজেই খাপ খাওয়াতে পারে। 
  • প্রায় সব ধরনের জলাশয়ে চাষ করা যায়। 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি। 
  • বিদেশি রপ্তানি যোগ্য। 
পাঙ্গাস মাছের খাবার তালিকা এবং পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আমাদের আলোচনার বিষয়। এরপর আমরা পাঙ্গাস মাছ চাষের পোনা মজুদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
photo

পাঙ্গাস মাছ চাষের পোনা মজুদ

পাঙ্গাস মাছের খাবার তালিকা নিয়ে আজকের এই আর্টিকেল। পুকুরে একক অথবা অন্য প্রজাতির মাছের সাথে একত্রে পাঙ্গাস মাছ চাষ করা যেতে পারে। একক চাষের ক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে ৫৮ সে মি আকারের ৫০-৬০ টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে। মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে সিলভার কার্প ৮-১০ টি, কাতলা ৫-৬ টি, রুই ১০-১২ টি এবং পাঙ্গাস ২০ টি পোনা থাকলে ভাল হয়। মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে মৃগেল, কাল বাউস, কার্পিট মাছ ছাড়া যাবে না। 

লেখকের মন্তব্য 

আজকের আর্টিকেলটির মধ্যে পাঙ্গাস মাছের খাবার তালিকা ও চাষ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি কিভাবে কম পুঁজিতে পাঙ্গাস মাছ চাষ করবেন তা আশা করি ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন। 

এছাড়া পাঙ্গাস মাছের রোগ বালাই কম তাই অন্যান্য মাছের তুলনায় পাঙ্গাসের খরচ কম। এছাড়া পাঙ্গাস মাছ জলজ উদ্ভিদ কে বেঁচে থাকে তাই খাবার কম প্রয়োজন হয়। আপনি চাইলে উপরোক্ত পদ্ধতিতে পাঙ্গাস মাছ চাষাবাদ করতে পারেন। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url