মাশরুম চাষ পদ্ধতি ৩ মাসে লক্ষ টাকা ইনকাম
মাশরুম বীজ তৈরির পদ্ধতি
মাশরুমের মাধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ভিটামিন রয়েছে। রান্না করলে দেখতে অনেকটা মাংসের মত মনে হয়। প্রতিনিয়ত মাশরুম খাওয়ার চাহিদা দিন দুন বৃদ্ধি চলেছে। অনেক কৃষক রয়েছে তারা মাশরুম চাষ শুরু করতে চাচ্ছে। কিন্তু কিভাবে মাশরুম বীজ তৈরি করতে হবে এই পদ্ধতিগুলো অনেক কৃষকের জানা নেই। প্রথমত আপনাকে ভালো মাটিতে বীজতলা তৈরি করতে হবে।
সাধারণত ল্যাবরেটরীতে দুটি পদ্ধতির মাশরুম বীজ উৎপাদন করা যায়।
- টিস্যু কালচার পদ্ধতি
- স্পোর কালচার পদ্ধতি
সাধারণত কৃষকরা টিস্যু কালচার পদ্ধতি মাশরুম বীজ তৈরি করে। প্রথমে গোল আলু ২৫০ গ্রাম, এগারওগার ২০ গ্রাম, গ্লকোজ ২০ গ্রাম, স্পারসিন ২৫০ গ্রাম। এসব কিছু মিলিয়ে সাধারণ তাপমাত্রায় ল্যাব্রেটারিতে ১০ - ১৫ দিন রাখতে হবে। এভাবেই মাশরুমের বীজ সঠিকভাবে তৈরি করা সম্ভব।
ওয়েস্টার মাশরুম চাষ পদ্ধতি
মাশরুম চাষ করতে সাধারণত বীজ বা স্পন প্যাকেট, ধানের খড়, পাতলা পলিথিন ব্যাগ, ঝুলন শকা বা বাঁশ, ছিদ্রযুক্ত কালো পলিথিন সিট, ঘরের উষ্ণতা ও আদ্রর্তা পরিমাপের জন্য হাইগ্রোমিটার, ঘরের উষ্ণতা ও আদ্রর্তা নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য স্প্রেয়ার, জীবাণুনাশক, ব্লেড বা ছোট ছুরি, বালতি এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক উপকরণ দরকার হয়ে থাকে।
- প্রথমে মাশরুম চাষ কেন্দ্র হতে মাশরুমের বীজ বা স্পন প্যাকেট সংগ্রহ করতে হবে।
- তারপর মাশরুমের প্যাকেট ৩০ মিনিটের জন্য পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। পানি থেকে ৩ড় মিনিট পরে মাশরুমের প্যাকেট তুলে নিতে হবে।
- মাশরুমের প্যাকেট ৫ থেকে ১০ মিনিট উপুড় করে রাখতে হবে যাতে প্যাকেট হতে অতিরিক্ত পানি ঝরে যায়। পানি ঝরে গেলে ঘরের পূর্ব নির্ধারিত স্থানে এটি রেখে দিতে হবে। প্রতিদিন এর উপর অন্তত ৩-৪ বার পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
- সাধারণত ৩-৪ দিন পর কাটা জায়গা থেকে অঙ্কুর গজাবে। অঙ্কুর গজানোর পর সেখানে মাঝে মাঝে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
- খাওয়ার উপযোগী মাশরুম উৎপন্ন হতে ৫ বা ৬ দিন সময় লাগবে। পরবর্তীতে খাবার উপযোগী মাশরুম উৎপন্ন হলে গোড়া থেকে তা তুলে দিতে হবে।
- বীজের যে জায়গাটি কাটা হয়েছিল সেখানে ব্লেড দিয়ে একটু চেঁছে দিতে হবে। পরিবর্তীতে ঐ বীজ থেকে পুনরায় মাশরুম গজাবে।
- একটি আধা কেজি ওজনের বীজ বা স্পন প্যাকেট থেকে ৩-৪ বার অর্থাৎ তা থেকে মোট ২০০-২৫০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যাবে।
মিল্কি মাশরুম চাষ পদ্ধতি
মিল্ক মাশরুম ছাতু আকারে বেশ বড়ো হয়। প্রধানত বর্ষনকালে নারকেল গাছের গোড়ায় সাদা দুধের মতো এই ছাতু জন্মায়। মিল্ক মাশরুম ছাতু অথবা মাশরুম আকারে বেশ বড়ো হয়। প্রধানত বর্ষাকালে নারকেল গাছের গোড়ায় সাদা দুধের মতো এই ছাতু জন্মায়। ২৫- ৩৫ ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রা ও ৮৫ - ৯৫ ভাগ আর্দ্রতা এই ছাতু চাষের জন্য আদর্শ।
- সোনালী রঙের পুরানো আমন ধানের খড় কায়েকদিন রোদে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে
- খড় ২-৩ সেমি কেটে চটের ব্যাগ ভরে ১২ ঘন্টা পরিষ্কার জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
- ভিজে খড়গুলি ঝুরিতে রেখে অতিরিক্ত জল ঝরিয়ে দিতে হবে। আিার গরম জলে প্রায় ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে শোধন করে নেওয়া প্রয়োজন।
- পলিথিনের ব্যাগ খড় দিতে হবে, এবং প্রতি কেজি ভিজে অবস্থায় ৩-৪ কেজি খড়ে ২০০ গ্রাম মাশরুমের বীজ দিতে হবে। পলিথিন ব্যাগের ভিতরে খড় ও বীজ দিয়ে ৪-৫ টি স্তরে সাজাতে হবে।
- ব্যাগের মুখ এমনভাবে বেধে দিতে হবে যাতে ব্যাগের মধ্যে বাতাস চলাচল করতে পারে।
- ১২-১৮ দিন পর যখন বেডের খড় ছত্রাকের অনুসূতে ছেয়ে যাবে তখন কম্পোষ্ট সার এক ইঞ্চি পুর করে পলিব্যাগের উপরের অংশে অর্থাৎ বেডের উপরে ছড়িয়ে দিতে হবে।
- স্পেয়ারের সাহায্যে খুব অল্প পরিমাণ জল দিয়ে হালকা পলিথিন দিয়ে চাপা দিতে হবে। ৩০-৪০ দিনের মধ্যে বেড থেকে কম্পোষ্ট ফুড়ে কুড়ি বের হবে।
- প্রয়োজনে মাঝে মাঝে দিনে দু - একবার করে বেডে অল্প করে জল স্প্রে করতে হবে।
- ৮- ১০ দিনের মধ্যে বেড থেকে মাশরুম তোলার উপযুক্ত হবে।
- প্রতি বেড থেকে ২-৩ বার মাশরুম তোলা যায়। এক ১ কেজি শুকনো খড় থেকে প্রায় ৫০০ - ৭০০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যায়।
মাশরুম কত টাকা কেজি
বতমান সময়ে মাশরুম জনপ্রিয়তা সবার মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন চাইনিজ খাবারে মাশরুমের ব্যবহার লক্ষণিয়। মাশরুম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী একটি খাবার। প্রতি কেজি মাশরুমের দাম ২০০-২৫০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হয়, আর খজরো ৩০০- ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
এই ভাবে হিসাব করলে দেখা যাচ্ছে, আপনার বসতবাড়িতে মাশরুম চাষ করে খুব অল্প খরচ করে ৩০- ৩৫ হাজার টাকা লাভ হবে। এর জন্য আপনাকে কিছু সময় আর ১-২ হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে।
মাশরুম চাষ পদ্ধতি কৃষি শিক্ষা
আশির দশকের শুরুতে এদেশে পরীক্ষামূলকভাবে মাশরুম চাষ শুরু হয়। সে সময় সাভারে অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আওতাধীন ২টি কালচার সেন্টারে একটি মাশরুম স্পন উৎপাদন হয়। উক্ত কেন্দ্রের উদ্যোগে আশপাশের চাষীদের স্পর্ন সরবরাহ ও মাশরুম উৎপাদনে কারিগরি সহায়তা প্রধানের মাধ্যমে মাশরুমের চাষ শুরু হয়।
মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণ
বাংলাদেশে বিভাগীয় ভাবে মাশরুম চাষ সেন্টার বা মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। যেমন - মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ঢাকা, মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চট্রগ্রাম ইত্যাদি। এভাবে প্রতিটি বিভাগীয় পর্যায়ে মাশরুম চাষ সেন্টার রয়েছে। তাছাড়া, মাশরুম চাষাবাদ বইও আছে। যা থেকে আপনি মাশরুম চাষ সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আজ আমি খুব চমৎকার একটি মাশরুম চাষ পদ্ধতি pdf আপনাদের সাথে শেয়ার করছি, এই বই থেকেও পনি অনায়াসেই মাশরুম চাষাবাদ শিখতে পারবেন। আপনি যদি মাশরুম চাষ করার পদ্ধতি জানেন, তবে বাণিজ্যিকভাবেও মাশরুম চাষ ও বিপননে সুবিধা অর্জন করতে পারবেন।
মাশরুম চাষে আয় ব্যয়
মাশরুম চাষ করে ভাগ্যবদল করেছেন অনেক মানুষ। জানুয়ারি মাসে মাশরুম প্রশিক্ষণ সেন্টার থেকে মাশরুম চাষের উপর প্রশিক্ষন নিতে পারবেন। সরকারি ভাবেও মাশরুম প্রশিক্ষণ নেওয়া ব্যবস্থা করা হয়। নিজের বসতবাড়ির পাশে মাশরুম চাষ শুরু করতে পারবেন।
অনেক কম সময়ে মাশরুম থেকে লাভ হতে শুরু হয়। মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা ইনকম করা সম্ভব। প্রতি প্যাকেট ৫০ টাকা খরচ করে মাশরুম বিজ কিনতে পারবেন। প্রতি প্যাকেট থেকে এক মাস অনবরত ফলন পাওয়া যায়। এক প্যাকেট মাসরুম বীজ থেকে ১৫-১৬ কেজি মাশরুম উৎপাদন হয়। প্রতি কেজি মাশরুমের দাম ২০০-২৫০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হয়, আর খজরো ৩০০- ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
এই ভাবে হিসাব করলে দেখা যাচ্ছে, আপনার বসতবাড়িতে মাশরুম চাষ করে খুব অল্প খরচ করে ৩০- ৩৫ হাজার টাকা লাভ হবে। এর জন্য আপনাকে কিছু সময় আর ১-২ হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে।
মাশরুম চাষ পদ্ধতি বই pdf
মাশরুম চাষের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি বাণিজ্য মাশরুম হতে পারে গ্রামীণ কৃষকদের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় একটি কৃষি সম্পদ। মাশরুম এমন একটি খনিজ উপাদান, যার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন- বি কমপ্লেক্স এবং ১৮ রকমের আ্যামাইনো এসিড।
বাণিজ্যিক ভাবে মাশরুম চাষ করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত। তবেই আপনি মাশরুম চাষ পদ্ধতি বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে পারবেন এবং মাশরুম চাষে লাভ - ক্ষতির বিষয়টা খুব সহজেই আয়ত্বে রাখতে পারবেন।
মাশরুম মূলত বর্জ্য পদার্থ হতে উৎপন্ন হয়। জরিপে দেখা যায় যে, আমাদের দেশে প্রতি বছর ৪২০ মিলিয়ন টন কৃষিজ বর্জ্য এভাবেই পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। যা ব্যবহার করে ২১০ মিলিয়ন টন মাশরুম চাষ করা যেতো।আর এই ২১০ মিলিয়ন টন মাশরুম থেকে ১০ মিলিয়ন টন প্রোটিক আমরা পেতে পারি। যা পুরো ভারতবর্ষের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দেশের মানুষের অপুষ্টির অভাব পূরণ করা যাবে।
ডাউনলোড :মাশরুম চাষ pdf
মাশরুম সহজপচ্য খাদ্য শিশু, গর্ভবতী, বৃদ্ধ এবং হার্টের রোগী, ডায়েবিটিস, গ্যাসের, হাইপারটেনশন, কোষ্ঠকাঠিন্যে এবং রক্তপ্লানা রোগীদের জন্য উত্তম পথ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এগুলো ছাড়াও মানবদেহের ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন পুষ্টির পূর্ণতাদানে মাশরুম অত্যন্ত কার্যকরী।
আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url