কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার ১৫ টি উপকারিতা
কারোজিরা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী একটি খাদ্য। কালোজিরা নিয়মিত এবং সঠিক পরিমাণে খেতে পারল আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। আজকের এই পোস্ট আমর কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়া উপকারী সম্পর্কে আলোচনা করব।
কালোজিরা খাওয়ার সময় বলতে নির্দিষ্ট যেকোন সময় প্রতিদিন কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়া উচিত। তবে রাত ঘুমানোর আগে অথবা সকাল কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়া উপকারী সব থেকে বেশি। আজকে আমরা কালোজিরা খাওয়া নিয়ম, কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা, কালোজিরা খাওয়ার অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
সূচিপত্র
কারোজিরার বৈজ্ঞানিক নাম কী?
সাধারণত কালোজিরা নামে পরিচিত হলেও কালোজিরার আরো কিছু নাম আছে। যেমন- কালো কেওড়া, রোমান করিয়েন্ডার বা রোমান ধনে, নিজেলা ফ্লাওয়ার, হাব্বাটুসউডা ও কালঞ্জি ইত্যাদি. কালোজিরার বৈজ্ঞানিক নাম nigella sative. যে নামেই ডাকা হোকনা কেন এই কালো বীজের স্বাস্থ্য উপকারিতা অপরিসীম। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিধন থেকে শুরু করে শরীরের কোষ ও কলার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে কালোজিরা। শুধুমাত্ত স্বাস্থ্যের জন্যেই না কালোজিরা চুল ও ত্বকের জন্যেও অনেক উপকারী। প্রত্যেকের রান্নাঘরেই কালোজিরা থাকে যা খাবারকে সুবাসিত করে। আসুন আমরা আজ আশ্চর্য বীজ কালোজিরার উপকারিতাগুলো জেনে নেই।
স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি ও সর্দি দূর করতে কালোজিরা
এক চা - চামচ পুদিনাপাতার রস বা কমলার রস বা এক কাপ রঙ চায়ের সাথে এক চা- চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার করে নিয়মিত সেব্য। যা দুশ্চিন্তা দূর করে। এছাড়া কালোজিরা মেধার বিকাশের জন্য কাজ করে দ্বিগুণ হারে। কালোজিরা নিজেই একটি অ্যান্টিবায়াটিক বা অ্যান্টিসেপটিক। মস্তিষ্কের রক্ত সন্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।কালোজিরা খেলে আমাদের দেহে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হয়। এতে৷ করে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি হয়। যা আমাদের স্মৃতি শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
সর্দি সারাতে:
এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধু বা এক কাপ রং চায়ের সাথে মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার সেব্য এবং মাথার ও ঘাড়ে রোগ সেরে না যাওয়া পর্যন্ত মালিশ করতে হবে। এছাড়া এক চা - চামচ কালোজিরার সঙ্গে তিন চা - চামচ মধু ও দুই চা - চামচ তুলশী পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বর, ব্যথা, সর্দি - কাশি দূর হয়। সর্দি বসে গেলে কালজিরা বেটে কপালে প্রলেপ দিন। একই সঙ্গে পাতলা পরিষ্কার কাপড়ে কালিজরা বেধে শুকতে থাকুন, শ্লেষ্মা তরল হয়ে ঝরে পড়বে। আরো দ্রুত ফল পেতে বুকে ও পিঠে কালিজিরার তেল মালিশ করুন।
উচ্চরক্তচাপ, চোখের ব্যথা দূর করতে ও চোখের ব্যথা দূর করতে
যখনই গরম পানীয় বা চা পান করবেন তখনই কালোজিরা কোন না কোন ভাবে সাথে খাবেন। গরমখাদ্য বা ভাত খাওয়ার সময় কালোজিরা ভর্তা খান। এ উভয়পদ্ধতির সাথে রসুনের তেল সাথে নেন।সারা দেহে রসুন ও কালোজিরা, নিম ও রসুনের তেল একসাথে মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করুন। ভালো মনে করলে পুরাতন রোগীদের ক্ষেত্রে একাজটি ২/৩ দিন অন্তরও করা যায়।
রাতে ঘুমোবার আগে চোখের উভয়পাশে ও ভুরুতে কালোজিরা তেল মালিশ করুন এবং এককাপ গাজরের রসের সাথে একমাস কালোজিরা তেল সেবন করুন। নিয়মিত গাজর খেয়ে ও কালোজিরা টিংচার সেবন আর তেল মালিশে উপকার হবে। প্রয়োজনে নির্দেশিত হোমিও ও বায়োকেমিক ওষুধ সেবন।সমপরিমাণ বিশুদ্ধ মধু। কালোজিরা উত্তমরূপে গুড়ো করে মধুর সাথে মিশ্রিত করে দুই চামচ মিশ্রণ আধাকাপ গরম পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন আধাকাপ তেল সহ পান করতে হবে। কালোজিরার টিংচার মধুসহ দিনে ৩/৪ বার ১৫ ফোটা সেবন করতে পারেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি করতে কালোজিরা
কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সতেজ থাকে। এতে করে যে কোন জীবানুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেহকে প্রস্তত করে তোলে এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। ১ চামচ কালোজিরা অথবা কয়েক ফোটা কালোজিরার তেল ও চামচ মধু প্রতিদিন সেবন করলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি করতে কালোজিরা :
দুই বছরের অধিক বয়সী শিশুদের কালোজিরা খাওয়ানোর অভ্যাস করলে দ্রুত শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটে।শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থতা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও অনেক কাজ করে কালোজিরা।দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালোজিরার তেল সেবন করা উচিত নয়। তবে বাহ্যিক ভাবে ব্যবহার করা যাবে।
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে ও জৈব শক্তি বৃদ্ধির জন্য কালোজিরা
ত্বকের গঠনের উন্নতি ও ত্বকের প্রভা বৃদ্ধির জন্য কালোজিরা অত্যাবশ্যকীয়। এতে লিনোলেইন ও লিনোলেনিক নামের এসেনমিয়াল ফ্যাট এসিড থাকে যা পরিবেশের প্রখরতা, স্ট্রেস ইত্যাদি থেকে আপনার ত্বককে রক্ষা করে এবং ত্বককে সুন্দর করে ও ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে।
কালোজিরা নারী - পুরুষ উভয়ের যৌনক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন কালোজিরা খাবারে সাথে খেলে পুরুষের স্পার্ম সংখ্যা বৃদ্ধি সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা তৈরি করে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিন আছে যে, কালিজিরা যৌন ক্ষমতা বাড়ায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। একচা - চামচ মাখন, চা - চামচ জাইতুন তেল সমপরিমাণ কালোজিরার তেল ও মধুসহ দৈনিক ৩ বার ৪/৫ সপ্তাহ সেব্য। তবে পুরানো কালোজিরা তেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
ডায়বেটিস ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে কালোজিরা
ডায়াবেটিকদের রোগ উপশমে বেশ কাজে লাগে কালিজিরা। এক চিমটি পরিমাণ কালিজিরা এক গ্লাস পানির সঙ্গে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেয়ে দেখুন, রুক্তে গলকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এছাড়া এক কাপ চা - চামচ কালোজিরার তেল, এক কাপ রং চা বা গরম ভাতের সাথে মিশিয়ে দৈনিক ২ বার নিয়মিত সেবা। যা ডায়বেটিকস নিয়ন্ত্রণে একশত ভাগ ফলপ্রসূ।
ব্লাড প্রেসারনিয়ন্তনে রাখতে :
প্রতিদিন সকালে রসুনের দুটি কোষ চিবিয়ে খেয়ে এবং সমস্ত শরীরে কালোজিরার তেল মালিশ করে সূর্যেরতাপে কমপক্ষে আধাঘন্টা অবস্থান করতে হবে এবং এক চা-চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণমধুসহ প্রতি সপ্তাহে ২/৩ দিন সেব্য যা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ রাখে। এছাড়া কালোজিরা বা কালোজিরা তেল বহুমুত রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং নিম্ন রক্তচাপকে বৃদ্ধি করে ও উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাস করে।
কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার বিজ্ঞানসম্মত উপকারিতা
অতিরিক্ত কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয়
- কিছু লোকের কালোজিরা খাওয়ার পর পেট খারাপ, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া এবং পেট ফোলাভাবের মতো পেটের সমস্যা হতে পারে।
- এটি বিশেষ করে যারা বেশি পরিমাণে কালোজিরা খান তাদের জন্য হতে পারে।
- কালোজিরা রক্ত পাতলাকারক গুণাবলী ধারণ করে, যার অর্থ এটি রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতাকে হ্রাস করতে পারে।
- যারা ইতিমধ্যেই রক্ত পাতলাকারক ওষুধ সেবন করছেন তাদের কালোজিরা খাওয়া এড়ানো উচিত কারণ এটি রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- কিছু লোকের কালোজিরা অ্যালার্জি হতে পারে
- অ্যালার্জির লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুসকুড়ি, চলকানি, শ্বাসকষ্ট এবং মুখ গলার ফোলাভাবে।
- আপনার যদি অ্যালার্জির কোনও ইতিহাস থাকে তবে কালোজিরা খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
- গর্ভবতী বা স্তন্যদান মহিলাদের কালোজিরা খাওয়া এড়ানো উচিত কারণ এর গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যদানের উপর প্রভাব সম্পর্কে পর্যাপ্ত গবেষণা নেই।
- কালোজিরা কিছু ঔষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে রক্ত পাতলাকারক, রক্তচাপের ঔষধ এবং ডায়াবেটিসের ঔষধ।
প্রতিদিন কতটুকু কলোজিরা খাওয়া উচিত
- কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত তা নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর যার মধ্যে রয়েছে -
- আপনার বয়স : শিশুদের প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় কম কালোজিরা খাওয়া উচিত।
- আপনার স্বাস্থ্য : যদি আপনার কোনও চিকিৎসা অবস্থা থাকে, যেমন ডায়াবেটিস বা রক্তচাপের সমস্যা, তাহলে কতটুকু কালোজিরা খাওয়া নিরাপদ তা নিয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত।
- আপনার ব্যক্তিগত সহনশীলতা : কিছু লোক অন্যদের তুলনায় কালোজিিরার প্রতি বেশি সংবেদনশীল হতে পারে।
কলোজিরা এবং মধু একসাথে খাওয়ার কিছু উপকারিতা
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি : কালোজিরা এবং মধুর উভয়ই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়। একসাথে সেবন কররে।
- প্রদান কমাতে সাহায্য করে : কালোজিরা এবং মধুর উভয়ের প্রদাহ - বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। একসাথে সেবন করলে গাটরাত এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত অবস্থার লক্ষণগুলি হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে।
- কাশি এবং সর্দি উপশম করতে সাহায্য করে : মধু কাশি এবং সর্দি উপশম করতে সাহায্য করে। কালোজিরা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে।
- হজম উন্নত করতে সাহায্য করে : কালোজিরা হজম উন্নত করতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়। মধুর প্রিবায়োটিক বৈশিষ্ট্যগুলো সুস্থ হজমের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে পারে।
আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url