সকালে ডিম খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও সঠক নিয়ম
ডিম একটি অতি পরিচিত পুষ্টিকর খাবার। আর সকালে ডিম খাওয়ার উপকারিতা অনেক। যা আমরা প্রতিনিয়ত খেয়ে থাকি তবে সঠিকভাবে কেউ ডিম ও এক গ্লাস পানি পান করলে সারা দিন কর্মঠ থাকা যায় এবং মাসে ৩ পাউন্ড ওজন কমে। অন্যান খাবারের থেকে ডিম শরীরে প্রচুর ক্যালোরির জেগান দেয়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে একটি সিদ্ধ ডিম খেতে হবে।লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ডিম বেশি সিদ্ধ না হয়ে যায়।ভাজি ডিম শরীরে ফ্যাট উৎপাদন করে। তাই যারা ফ্যাট থেকে দূরে থাকতে চান তারা ভাজি ডিম পরিহার করুন। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে একটি সিদ্ধ ডিম খেলে শরীরের পেশি গঠনে ভূমিকা পালন করে।
ডিম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারীতা
- ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
- ভাজা ডিম ও ডিম পোচ
- সিদ্ধ ডিম
- প্রতিদিন কয়টা ডিম খেতে হবে
- ডিম খাওয়ার সময় লক্ষণীয়
- প্রোটিনের উৎস
- যে প্রক্রিয়ায় ডিম খেতে হবে
- সকালে ডিম খাওয়ার উপকারীতা
- হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার অউপকারীতা
- আমাদের মন্তব্য
সকালে ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
- শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে কোলেস্টেরল দরকার আছে। তাই ডিমে রয়েছে এ ভালো কোলেস্টেরল। এটি দেহের মন্দ কোলস্টরল দূর করতে সাহায্য করে।
- হার্টের রোগীদের জন্য ডিম অনেক উপকারী। নিয়মিত ডিম খেলে হার্টের রক্ত চলাচল সঠিক মাত্রায় থাকে। এছাড়া হার্ট অ্যাটাকসহ বিভিন্ন আশঙ্কা দূর করে।
- শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা একটি বড় অংশ। একটি ডিম আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পরিপূরক। অনেকের শরীরে নানা রকম রোগ বা রোগের উপসর্গ দেখা দেয় তখনই বুঝতে হবে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। তাই নিয়মিত হাফ সিদ্ধ ডিম খাওয়া সবার উচিত।
- ডিমে ভিটামিন বি কমপেস্নক্স পাওয়া যায় যা আমাদের দাঁত, চুল, ত্বক ও চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অনেকের চুল ও ত্বক রুক্ষতাসহ বৃদ্ধির ছাপ দেখা দেয়। তাদের নিয়মিত ডিম খাওয়া উচিত। এছাড়া ডিমের সাদা অংশ চুল ও ত্বকে লাগালে চুলের রুক্ষতাসহ ত্বক পরিষ্কার করতেও বেশি কার্যকারী।
- ডিমের কেরোটিনয়েড, লুযটেন বয়সকালে চোখের অসুখ ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।যারা রাতকানা রোগে ভুগে থাকেন এবং চোখে পরিষ্কার দেখতে পারবেন না তারা প্রতিদিন সকালে একটি সিদ্ধ ডিম খেয়ে মধু পান করতে পারেন।
- ডিমে প্রচুর জিংক, আয়রন এবং ফসফরাস পাওয়া যায়। অনেক মেয়েদের মাসিকের সময় পেটে অতিরিক্ত ব্যথা এবং রক্তপাত হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে অ্যামিনিয়া দেখা দিতে পারে। তাদের জন্য ডিম বেশি ভালো ফলাফল দেয়। তাই মাসিক শুরু হওয়ার ১ ঘন্টার মধ্যে একটি সিদ্ধ ডিম আধা সিদ্ধ করে খেলে শরীর ফিট থাকে।
- অনেকর নখ মরে যায় এবং নখ ভেঙে যায়। ডিমের সাদা অংশ মরা বা ভাঙা নখের ওপর প্রলেপ দিলে নখ সুস্থ হয়ে যায়। নখের মাঝে কালো দাগসহ আঙুলের চামড়া ওঠা দূর করে থাকে ডিম।
ভাজা ডিম ও ডিম পোচ ডিমের পুষ্টিগুণ
ডিম ভাজর ক্ষেত্রে যদি অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করা হয় তখন সেটি স্বাস্থ্যসম্মত হবে না। তেল দিয়ে ভাজা হলে ডিমের পুষ্টি উপাদান কমবে না,কিন্তু অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট বেড়ে যাবে। যেটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সেক্ষেত্রে একটু বাটার ব্রাশ করে তেল স্প্রে করে ভাজলে স্বাস্থ্যসম্মত হবে।
ডিম পোচের ক্ষেত্রেও যদি অতিরিক্ত তেল দিয়ে করা হয় তবে সেটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার কারণ হতে পারে। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাদের প্রদাহ শুরু হতে পারে। তবে পোচ যদি অল্প তেল ব্রাশ করে বা ওয়াটার পোচ বা চামচে স্টিমের মাধ্যমে পোচ করা হয় সেটি বেশি স্বাস্থ্যসম্মত হবে।
সকালে সিদ্ধ ডিম খাওয়া
সিদ্ধ ডিম খাওয়া সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যসম্মত মনে করা হয়। কারণ এটিতে তেল ব্যবহার করা হয় না। ডিম অল্প সেদ্ধ বা বেশি সিদ্ধ যেভাবেই খাওয়া হোক পুষ্টিমান একই থাকে, পরিবর্তন হয় না। তবে কাচা ডিমে অনেক ব্যাকটেরিয়া থাকে। অল্প সেদ্ধ অর্থাৎ ৩-৪ মিনিট সেদ্ধ করলে অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া থেকে যেতে পারে। তাই ৭-৮ মিনিট সেদ্ধ করে খাওয়া হলে সবচেয়ে ভালো। আবার কেউ ১০-১২ মিনিট সেদ্ধ করে শক্ত কুসুম খেতে চাইলে খেতে পারেন।
ডিম পোচ,ভাজা,সেদ্ধ যেভাবে খাওয়া হোক সেটা পুষ্টিসমৃদ্ধ হবে যদি রান্নার পদ্ধতি স্বাস্থ্যসম্মত হয়।এগুলো ছাড়া আরও কিছু উপায়ে ডিম খেলে ডিমের পুষ্টিমূল্য বৃদ্ধি পায়। যেমন- অনেক সময় বাচ্চারা ডিম খেতে চায় না। এক রকম সেদ্ধ বা পোচ খেতে ভালো লাগে না। সেক্ষেত্রে ডিমের সঙ্গে যদি বিভিন্ন সবজি যোগ করে ভাজা হয় বা পনির,চিজ,এক কাপ দুধ যোগ করে বেক করা হয় তখন সেটা খেতেও সুস্বাদু হবে, পাশাপাশি এটি হবে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার।
একজন মানুষ দিনে কয়টা ডিম খেতে পারবেন সেটা নির্ভর করবে তার শারীরিক অবস্থার ওপর। একজন পুরোপুরি সুস্থ মানুষ প্রতিদিন একটা অনায়াসে খেতে পারবেন। ৩৫ বছর পর্যন্ত একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন একটা ডিম খেতে পারবেন। এছাড়া ২-৩ টি ডিমের সাদা অংশ খেতে পারবেন প্রতিদিন। ৪০ বছর বয়সের বেশি যারা তারা সর্তকতার জন্য চাইলে সপ্তাহে ৪ দিন ডিমের কুসুমসহ এবং বাকি ৩ দিন ডিমের কুসুম ছাড়া সাদা অংশ খেতে পারেন।
যাদের রক্তের চর্বি বেশি, কোলেস্টেরল সম্যাসা,কিডনির সমস্যা আছে তাদের শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে তারা কী পরিমাণ ডিম খেতে পারবেন। দেখা যায়, অনেক সময় রোগীকে ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে সাদা অংশ খেতে বলা হয়। আবার কিছুদিন ডিমের কুসুমসহ খেতে বলা হয়। এসব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম খেতে হবে।
যারা জিম করেন অথবা অ্যাথলেটর তারা দিনে অতিরিক্ত ৭-৮ টা পর্যন্ত ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন। ডিমের কুসুম কম খেতে বলা হয় কারণ এটির জন্য কোলেস্টরল বাড়তে পারে। ডিমের সাদা অংশে অ্যালবুমিন থাকে,যা শরীরের জন্য ভালো।
ডিম খাওয়ার সময় লক্ষণীয় বিষয়
- ডিম কাঁচা পোচ করে খাওয়া যাবে না। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও শিশুদের।এতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।
- কোলেস্টেরল বেশি না থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি না থাকলে ডিম অল্প তেল যোগ করে খেতে পারেন। কারণ ডিম সিদ্ধ থেকে ডিম ভেজে খেলে প্রায় প্রতিটি ভিটামিন বেশি পাওয়া যায়। বিশেষ করে শিশুদের এভাবে দিন।
- ডিমের মধ্যে আয়রন, ক্যালসিয়াম,ভিটামিন ডি ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ভালো থাকায় ডিম খাওয়ার পর চা, চিনিযুক্ত খাবার, দুধ বা সয়াজাতীয় খাবার খাবেন না।
- ডিম যেহেতু প্রোটিনের ভালো উৎস, তাই প্রোটিনের চাহিদা ও অন্যান প্রোটিন খাবার কেমন খাচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করে ডিম খেতে হবে।
- ডিম ধরার পর অবশ্যই হাত সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
প্রোটিনের উৎস হিসাবে ডিম প্রধান
আমাদের বডিতে প্রচুর পরিমাণ অ্যামাইনো অ্যাসিড প্রয়োজন হয় এবং সেটা কিন্তু প্রোটিন থেকে আসে। ডিম এমন একটা প্রোটিনের সোর্স যেখান থেকে খুব ভালো অ্যামাইনো অ্যাসিড আমরা পাই। ডিমে যে প্রোটিন আছে অ্যালবুমিন,এটা কিন্তু ডিম ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো খাবারে নাই। এই অ্যালবুমিনটা আমাদের বডির জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের অনেকগুলো অর্গানের সাথে, অনেকগুলো রোগের জন্য এই অ্যালবুমিনটা কিন্তু ইনটেক করতে হয়।এটাকে রেফারেন্স প্রোটিন বলা হয়। অর্থাৎ আপনি অন্য প্রোটিন খেতে পারছেন না, তাহলে ডিমের মতো প্রোটিনকে আপনি খাদ্যতালিকায় যোগ করুন। কারণ আপনার বডির যে সেল রিপেয়ারমেন্ট থাকে, বিশেষ করে একজন ক্যানসার রোগীর প্রচুর সেল নষ্ট হয়, তখন তার ট্রিটমেন্টর একটা মেজর পার্ট,তার ডায়েটের ডিম থাকে।একজন ক্যানসার পেশেন্টকে পার ডেতে আমাদেরকে অনেক সময় ৫ থেকে ৬ টা করে ডিম খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে।
যে প্রক্রিয়ায় ডিম খেতে হবে প্রতিদিন
প্রত্যেকটি খাবারেরই কিন্তু প্রসেসিং অবস্থায় পুষ্টিগুণটা নষ্ট হয়ে যায়। ডিমটা যখন আমরা বয়েল ফরমে খাব, তখন কিন্তু ফুল নিউট্রশনটা পাচ্ছি। ডিমে যেসব ভিটামিন থাকে এ,ডি,ই,কে এই চারটি জিনিস কিন্তু শুধু বয়েল করে খেলে অনেক সময় পাওয়া যায় না, কিন্তু আমার বয়েল ডিমের সাথে যদি অন্য একটা ফ্যাট,লাইক দুধ খেয়ে নিই,পাশাপাশি দুধ এবং ডিম খেয়ে নিই, তাহলে দুধের ফ্যাট,ডিমের ভিটামিন ধারণ করবে।
যদি আমি ডিম খেতে না পারি,তাহলে ব্রেডের সঙ্গে একটু বাটার নেওয়া হয় বা অনেক সময় ডিম বাটার দিয়ে খাওয়া যায়। তাতে কিন্তু আমাদের কাজ হবে বা সপ্তাহে তিন চার দিন বয়েল করে খেলাম, চার দিন পোচ করে খেলাম।অর্থাৎ ফ্রাইপ্যানে তেল দিয়ে বা বাটার দিয়ে ডিমটাকে ছেড়ে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ক্যালোরিটা বেড়ে যাবে। অথাৎ প্রত্যেকটা উপাদান পাওয়া যায়।
সকালে খালি পেটে সিদ্ধ ডিম খাওয়া উপকারীতা
একটি মাত্র হাফ বয়েল সিদ্ধ ডিম থেকে প্রায় ১০০ গ্রাম কিলোক্যালারি ৮ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায় যা আমাদের সারাদিন কাজে অনেক এনার্জি যোগায় এবং শরীর থেকে প্রোটিনের ঘাটতি নিমিষেই দূর করে। সকালে খালি পেটে সিদ্ধ ডিম সরাসরি আমাদের শরীরের কাজে আসে এই জন্য সকাল বেলা খালি পেটে সিদ্ধ ডিম খাওয়া অনেক বেশি উপকারী। বিশেষ করে নরম কুসুমযুক্ত হাফ বয়েল সিদ্ধ ডিম শরীরের জন্য বেশি উপকারী।
হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার অউপকার
কোন ব্যক্তি যদি অতিরিক্ত হাফ বয়েল ডিম খায় তাহলে তার শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন উচ্চ রক্তচাপ,হার্টের সমস্যা। সেই অতিরিক্ত হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার ফলে শরীর ফুল মোটা হয়ে যেতে পারে। যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত তারা কখনোই ভুলেও দিনে দুইটা বেশি ডিম খাবেন না। অতিরিক্ত ডিম খাওয়ার পরে যা হতে পারে -
- পিত্তীর পাথর হতে পারে
- পেট খারাপ হতে পারে
- উচ্চ রক্তচাপ অথবা হাইপ্রেসার দেখা দিতে পারে
- হার্টের নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে
- ত্বকে লাল লাল রেস সৃষ্টি হতে পারে
- হজম শক্তিতে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
আমাদের মন্তব্য
সকালে ডিম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারী সম্পর্কে আমরা উপরের ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি আপনার এই পোস্টটি পড়ে কাজে আসবে। যদি আমর আলোচনা ছাড়াও কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আমাকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমি আপনাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। এত দীর্ঘ সময় ধরে আমার ব্লগ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url